ওভারি সিস্ট মানে অল্প বয়সের ঋতুস্রাব এবং হরমোনের সমস্যা, অনিয়মিত পিরিয়ড ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা অনেক মহিলারাই হয়ে থাকে। এই আর্টিকেলে আপনাদের ওভারি সিস্ট দূর করার ঘরোয়া উপায় এবং ওভারি সিস্ট দূর করার ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আপনি যদি একজন ওভারি সিস্ট ভোগান্ত রোগী হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আজকের এই আর্টিক্যাল পোস্টে আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই পোস্টে আমরা ওভারি সিস্ট দূর করার ঔষধ সহ ওভারি সিস্ট দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। যারা জানতে আগ্রহী তারা পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ওভারি সিস্ট কি
আমরা আজকে যেই বিষয়টা নিয়ে কথা বলবো প্রথমে সেটা হচ্ছে ওভারি সিস্ট কি। ওভারিয়ান সিস্ট এক ধরনের টিউমার। এবং ওভারিয়ান সিস্ট ভালো ধরনের টিউমারী বুঝায়। সিস্ট মানে হল পানির থলি।ওভারের মধ্যে যখন বিভিন্ন কারণে যখন পানি জমে পানি থলির মতো তৈরি হয় তখন সেটাকে বলা হয় ওভারিয়ান সিস্ট। ওভারিয়ান সিস্ট এর কোন বয়স সীমা নেই।
আরো পড়ুনঃ সেরা নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার
ওভারিয়ান সিস্ট অনেক ধরনের হতে পারে। সিস্ট একটি জ্বর আছে সে জিনিসটা বিভিন্ন অর্গান এ থাকতে পারে যেমন লিভারে থাকলে বলা হয় লিভারসিস্ট এবং কিডনিতে থাকলে বলা হয় কিডনি সিস্ট।যদি ও ওভারিতে থাকে তাহলে আমরা বলি ওভারিয়ান সিস্ট। আশাকরি বুঝতে ওভারি সিস্ট কি পেরেছেন।
ওভারি সিস্ট দূর করার ঘরোয়া উপায়
অনেক মহিলারা বুঝতে পারে না যে তাদের ওভারিয়ান সিস্ট হয়েছে। শরীরের কোন ক্ষতি না করলেও সিস্ট সংখ্যা যদি বাড়তে থাকে এবং একেকটি সিস্ট এর আকার যদি বড় হতে থাকে তবে চিন্তার বিষয়। সিস্ট অনেক রকমের হয়ে থাকে।
এই ধরনের রোগের চিকিৎসায় এ্যালোপ্যাথি মেডিসিন ব্যবহার করা হলেও কিছু ঘরোয়া পদ্ধতির রয়েছে যেগুলো অনুসরণ করলে আপনি ওভারি সিস্ট দূর করার দূর করা সম্ভব। তাই চলুন ওভারি সিস্ট দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো জেনে নেওয়া যাক।
১. অ্যাপেল সিডার ভিনেগারঃ শরীরে পটাশিয়াম এর ঘাটতি দূর করতে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার খুবই উপকারী এবং সিস্ট দূর করতে প্রাকৃতিক উপায়ে বেশ কার্যকারী। এক গ্লাস গরম পানিতে এক চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে প্রতিদিন এক থেকে দুই গ্লাস খেলেই উপকার পেয়ে যাবেন।
২. গরম সেকঃ ওভারি সিস্টের কারণে পেটে ব্যথা হলে দ্রুত গরম সেক দিতে হবে ফলে ব্যথাটা কিছুটা কমে যাবে।এক্ষেত্রে একটি গাছের বোতলে পরিমাণ মতো গরম পানি নিয়ে তলপেটে অথবা পেলভিক এরিয়ায় ১৫ মিনিট রেখে দিতে হবে দেখবেন আরাম পাবেন।
৩. রেড়ির তেলঃ মোটা একটা কাপড় নিয়ে তাতে দুই চামচ বেড়ির তেল দিয়ে দিন। তারপরে একটি টাওয়ালের ওপর বেশি পেটের উপর বেড়ির তেল দেওয়া কাপড়টি জড়িয়ে নিন এবং পেটের ওপরে একটি গরম পানির বোতল রেখে নিজেকে মোটা চাদর দিয়ে ঢেকে নিন এইভাবে ৩০ মিনিট থাকুন তারপর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন এইভাবে সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করলেই ওভারি সিস্ট থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
৪. আদাঃ আদা অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ওভারিয়ান সিস্টের যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে শুধু তাই না এই রোগের কারণে পিরিওডে কোন ব্যথা সৃষ্টি যাতে না হয় সে ক্ষেত্রেও খেয়াল রাখে। একটি বিলিন্ডারে দুই ইঞ্চি আদা সঙ্গে দুই আরটি হাফ ক্লাস আপেলের রস, সেলারি শাক, অল্প করে আনারসের রস ভালো করে মিশিয়ে খেতে হবে। প্রতিদিন একবার করে খেলে সিস্ট একেবারেই দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
৫. বিট জুসঃ বিট জুস এতে থাকা বেটা সিয়ামিন নামে একটি উপাদান রয়েছে যা লিভারের কর্ম ক্ষমতা বাড়াতে বেশ সাহায্য করে এবং শরীরে ক্ষতিকারক দূষিত পদার্থ দূর করে। সেই সঙ্গে শরীরে এসিডিটি মাত্রা ঠিক রাখে।
ওভারিয়ান সিস্টে মাত্রা কমাতে বিট জুস কাজে লাগাতে পারে। বিট জুসের সঙ্গে ১ চামচ এলোভেরা জেল মিশিয়ে খেয়ে নিতে হবে এবং প্রতিদিন খাওয়ার আগে এক গ্লাস এটি খেতে হবে। হলে ওভারিয়ান সিস্ট কমে যাবে।
৬. ইপসাম লবণ এবং গোলাপ তেলঃ ওভারি সিস্ট দূর করার ঘরোয়া উপায় হিসেবে ইপসাম লবণ এবং গোলাপ তেল বেশ কার্যকর উপায়। গোসল করার সময় এক বালতি গরম পানির সাথে পরিমাণ মতো ইপসাম লবণ এবং গোলাপ তেলের দশ ফোটা মিশিয়ে নিন। ভালো করে নাড়ান যাতে দুটি উপাদান ভালোভাবে মিশে যেতে পারে।
আরো পড়ুন: নাভির চারপাশে ব্যথার কারণ
যখন দেখবেন সবকিছু ভালোভাবে মিশে গেছে পানির সাথে তখন শরীরের নিচের অংশে এই প্রাণীটি ঢালতে থাকুন। এছাড়াও এই পানিতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট চুবিয়েও রাখতে পারেন। এটি প্রতিদিন একবার করে রাখলে ওভারি সিস্ট দূর হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
৭. বেশি বেশি পানি খাওয়াঃ ওভারি সিস্ট দূর করতে বেশি পানি খাওয়ার বেশ উপকারী এবং বেশি পানি খেলে শরীরের ময়লা এবং টক্সিন দূর করতে করে এবং আপনি চাইলে পানির সাথে লেবু মিশিয়ে খেতে পারেন ফলে আরো উপকার পাওয়া যায়।
আশা করি ওভারি সিস্ট দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। উপরের উল্লেখিত খাবার গুলি আপনার খাবার তালিকায় যুক্ত করলে ঘরো উপায়ে আপনি ওভারিয়ান সিস্ট দূর করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
ওভারি সিস্ট কেন হয়
অ্যাডোলেসেন্ট রোগী যারা আছেন তাদের হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণে অথবা মাসিক অনিয়ম হওয়ার কারণে এবং কোন মহিলার ভিতর পুরুষের হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে এছাড়াও বংশগত কারণেও হতে পারে
এবং হরমোন জনিত বিভিন্ন সমস্যা কারণে এবং খাদ্যনালীতে ক্যান্সার, ওভার ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যানসার এইসব কারণেও ওভারিয়ান সিস্ট হতে পারে। আশা করি ওভারি সিস্ট কেন হয় জানতে পেরেছে।
ওভারি সিস্ট দূর করার ঔষধ
উপরের উক্ত আলোচনায় আমরা কিছু ওভারি সিস্ট দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আপনাদের জানিয়েছি এখন আপনাদের সাথে ওভারি সিস্ট দূর করার ঔষধ সম্পর্কে আলোচনা করব চলুন তাহলে ফিস্ট দূর করার ওষুধ কি।
গবেষণায় জানা গেছে যে বিভিন্ন হরমোনের সমস্যা বা অনিয়মিত মাসিকের এবং অল্প বয়সে পিরিয়ড শুরু হওয়ার জন্য ওভারিয়ান সিস্ট হয়ে থাকে অনেক মহিলারা আছে যারা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন কারণ সিস্ট অনেক ধরনের হয়ে থাকে। সিস্ট এক ধরনের টিউমার এটিকে যদি অবহেলা করা যায় সে ক্ষেত্রে বড় আকার ধারণ করে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এবং আরেকটি কথা এটা নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই ওজন বৃদ্ধির কারণেই এই রোগটি হতে পারে তাই আপনি যদি ওজন কমাতে পারলে ওভারিয়ান শিষ্টের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। এবং একজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে ডাক্তার যেই ওষুধগুলো আপনাকে সেবন করতে বলবে সেই ওষুধগুলো নিয়ম অনুসারে খেতে হবে।
এ আলোচনায় আপনাকে ওষুধ সম্পর্কে জানালাম না এর কারণ হচ্ছে ইন্টারনেটে কখনো ওষুধ দেখে খাবেন না কারণ এতে অনেক ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে তাই একজন ভালো ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধটি খাবেন দেখবেন ওভারিয়ান সিস্ট সমস্যাটি আল্লাহর রহমতে দূর হয়ে যাবে।
ওভারি সিস্ট এর লক্ষণ কি কি
আপনি যদি একজন মহিলা হয়ে থাকেন তাহলে কিভাবে বুঝবেন যে আপনার ওভারিয়ান সিস্ট হয়েছে তাই আপনাদের সুবিধার ক্ষেত্রে এই অংশে আমরা কিছু ওভারি সিস্ট এর লক্ষণ গুলো আপনাদের জানাবো। যেই লক্ষণগুলো আপনার ভিতর থাকলে আপনি বুঝবেন যে আপনার ওভারিয়ান সিস্ট হয়েছে।
- তলপেটে হালকা ব্যথা হতে পারে।
- মাসিক না হওয়ার কারণ বা মাসিক হতে দেরি হওয়া।
- রক্ত পড়া বা তীব্র ব্যথা যা সিস্ট ফেটে গেলে হয়।
- মলত্যাগ বা প্রসাব হতে সমস্যা হওয়া।
- মাসিকের সময় স্বাভাবিক ব্যাথার চাইতে অতিরিক্ত ব্যথা হওয়ার।
- কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া
- হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি হওয়া
- পেট ফাঁপা
- বুক জ্বালাপোড়া এবং পিঠ ব্যথা
ওপরের এই উল্লেখিত লক্ষণ গুলি যদি আপনার ভিতর দেখা দেয় সেক্ষেত্রে একজন ভালো ডাক্তারের পরামর্শ নিন আশা করি ওভারি সিস্ট এর লক্ষণগুলি জানতে পেরেছেন।
ওভারি সিস্ট অপারেশন খরচ কত
ডাক্তাররা ওষুধ দিয়ে থাকে সিস্ট গলানোর জন্য ওষুধ দিয়ে থাকে ফিস্ট যদি ৫ থেকে ৮ সেমি সে ক্ষেত্রে ওভারি সিস্ট অনেক মারাত্মক আকার ধারণ করে সে ক্ষেত্রে অপারেশন ছাড়া কোন উপায় থাকে না তাই অনেকেই ওভারি সিস্ট অপারেশন খরচ সম্পর্কে জানে না।
ওভারি সিস্ট অপারেশন খরচ একেক জায়গায় একেক রকমের হয়ে থাকি তাই বলা খুবই মুশকিল তাই আপনাদের ধারণা দেওয়ার জন্য ভারতে অপারেশন বাবদ জানা যায় ১১ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা লাগে। আপনাদেরকে শুধু অনুমান দেওয়ার জন্য বললাম বাংলাদেশ ওভারিয়ান সিস্ট অপারেশন খরচ কত হয় সেক্ষেত্রে বিভিন্ন মেডিকেলি বলতে পারবে।
ওভারি সিস্ট হলে কি বাচ্চা হয়
অনেকেই মহিলারা আছেন যারা প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার পর ওভারি সিস্ট এ আক্রান্ত হওয়ার পর বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন যে ওভারি সিস্ট হলে কি বাচ্চা হয়। তাই আমরা এই অংশে ওভারি সিস্ট হলে কি বাচ্চা হয় সেই প্রশ্নের উত্তরটি আপনাদের জানাবো তাই চিন্তার কোন কারণ নেই সিম্পল সিস্ট হলে বাচ্চা নিতে কোন সমস্যা হবে না।
আরো পড়ুনঃ ফেমিকন পিল খাওয়ার কত দিন পর মাসিক হয়
কিন্তু বিভিন্ন ওভারি সিস্ট হয়ে থাকে আপনারা জানেন যদি কোন মারাত্মক সিস্ট হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের চিকিৎসা নিয়ে ওষুধ গ্রহণ করে সুস্থ হওয়ার পর বাচ্চা নেওয়াটাই উত্তম। তবে এখন চিকিৎসা অনেক উন্নত হয়ে গেছে আপনি চাইলে গর্ভবতী অবস্থায় বাচ্চা নিতে পারেন কোন অসুবিধা নেই।
ওভারি সিস্ট দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে শেষ কথা
এই আর্টিকেলে আমরা অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি তার ভিতর মূল বিষয় ছিল ওভারি সিস্ট দূর করার ঘরোয়া উপায় এবং ওভারি সিস্ট দূর করার ঔষধ সম্পর্কে। ওষুধ সম্পর্কে তো আপনাদেরকে আগেই বলে দিয়েছি যে ইন্টারনেটে দেখে কোন রকম ওষুধ না খাওয়া উচিত কারণ শরীরে বিভিন্ন রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে তাই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়া উচিত।
এবং ওভারিয়ান সিস্ট দূর করার ঘরোয়া উপায়গুলো সম্পর্কে আপনাদেরকে জানিয়েছি যেগুলো অনুসরণ করলে খুবই দূরত্ব এবং খুব সহজেই আপনি ওভারিয়ান সিস্ট থেকে মুক্তি পেতে পারেন। আশা করি আপনি পোস্টটি পড়েছেন এবং উপকৃত হয়েছে।
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে বা কোন কিছুই জানার আরো বাকি থাকে সে ক্ষেত্রে নিচে কমেন্টে আমাদেরকে জানাতে পারেন। এবং প্রতিনিয়ত নানা রকম তথ্য আমাদের ওয়েবসাইটে চোখ রাখতে পারেন। ধন্যবাদ।