কোয়েল পাখির ডিমের ১৫টি উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক

প্রিয় পাঠক বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে কোয়েল পাখির জনপ্রিয়তা বেড়েছে বিশেষ করে কোয়েল পাখির ডিমের চাহিদা। কোয়েল পাখির ডিম অনেকেই খেয়ে থাকেন কারণ এর স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক তবে অনেক মানুষই জানে না এই কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা এবং ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে তাই আজকের এই আর্টিকেলে কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা এবং ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আলোচনা করব।

যারা কোয়েল পাখির ডিম নিয়মিত খান কিংবা খাওয়ার কথা ভাবছেন তাদের জন্য এই আর্টিকেল পোস্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে এই আর্টিকেলে কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা এবং ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব এর পাশাপাশি কোয়েল পাখির ডিম খেলে কি হয় ও শিশুদের জন্য কোয়েল পাখির ডিমে কি কি উপকারিতা রয়েছে সকল খুঁটিনাটি বিষয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করব। 

ভূমিকা

পৃথিবীতে যত প্রকার ডিম রয়েছে তার মধ্যে সবচাইতে পুষ্টিকর উপযোগী ডিম হচ্ছে কোয়েল পাখির ডিম। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বড় মানুষদেরও এই কোয়েল পাখির ডিম খেতে অনেক ভালো লাগে এই ডিমের রয়েছে প্রচুর উপকারিতা যা বলে শেষ করা যাবে না। অনেক মানুষই আছেন যারা কোয়েল পাখি লালন পালন করেন বাড়িতে শুধুমাত্র কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার জন্য। 

নিয়মিত যদি কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া হয় তাহলে কয়েকটি বড় বড় রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এই টিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান, খনিজ ও ভিটামিন যা আমাদের শরীর সুস্থ সবল রাখতে সহায়তা করে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে তেমন একটা জানেন না।

নিচে কোয়েল পাখির ডিম খেলে কি হয়, কোয়েল পাখির ডিমে এলার্জি আছে কিনা ও কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিক এবং উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

কোয়েল পাখির ডিম খেলে কি হয়

কোয়েল পাখির ডিম স্বল্প মূল্যে বেশ পুষ্টিগুণ বিশিষ্ট একটি খাবার। এলাকার ছোট বড় বাজারসহ সুপার শপগুলোতে কোয়েল পাখির ডিম বেশ সহজলভ্য। আকৃতিতে ছোট হওয়ায় এবং সাধারণ মুরগির ডিমের চাইতে তুলনামূলক কম গন্ধ থাকার কারণে এই অনেকেই খেতে খুব পছন্দ করেন। 

আরো পড়ুনঃ নাভির চারপাশে ব্যথার কারণ ও করণীয়

এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইডেট, চিনি, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং আরো অনেক ধরনের খাদ্য উপাদান এবং এই কোয়েল পাখির ডিম একসাথে দুই তিনটা অনায়াসে খাওয়া যায়। চলুন তাহলে কোয়েল পাখির ডিম খেলে কি হয় বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

  • শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়।
  • উচ্চ রক্তচাপ কমায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • হজম শক্তি বাড়ে এবং পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখে।
  • প্রদাহ কমায় এবং এলার্জি সমস্যা দূর করে।
  • দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে।
  • মূত্রথলি এবং কিডনিতে পাথর হতে বাধা দেয়।
  • দেহের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • হার্টের কার্যক্ষমতার উন্নত করে।
  • কিডনি এবং লিভারের কার্যক্ষমতা দুর্বল থাকলে সবল করে।
  • এসিডিটি কমাতে সাহায্য করে।
  • স্মৃতিশক্তি সবল রাখে।
  • বাচ্চাদের মানসিক ও শারীরিক বুদ্ধিমত্তা বিকাশ ঘটায়।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

চীনেরা কোয়েলের ডিমকে ডায়াবেটিস এবং অ্যাজমা রোগীর চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন।তো প্রিয় পাঠক ছোট এই কোয়েলের ডিম খেলে কি হয় সে সম্পর্কে আপনাদের জানালাম। তো আপনি যদি আপনার খাদ্য তালিকায় কোয়েলের ডিম রাখেন তাহলে আপনার স্বাস্থ্যের অনেক উন্নতি হবে।

কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার নিয়ম

অনেকেই কোয়েল পাখির ডিম কিভাবে খেতে হয় সেটা জানতে চেয়ে থাকেন। কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া নিয়ম একদম সহজ। আপনি কোয়েল পাখির ডিমটি সিদ্ধ করে খেতে পারেন যেভাবে মুরগির ডিম সিদ্ধ করে খান ঠিক সেভাবে খেতে পারেন। প্রথমে ডিমটি গরম পানিতে দিয়ে ৭ মিনিটের মতো সিদ্ধ করে নিতে হবে এমন ভাবে সিদ্ধ করতে হবে যাতে ডিমের কুসুম ভালোভাবে সিদ্ধ হয়।

কারণ আমাদের চারপাশে এত বেশি ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস রয়েছে যার ফলে শুধু ডিম নয় যে কোন জিনিসই ভালোভাবে সিদ্ধ করে খাওয়া উচিত। ডিমগুলো ৭ মিনিটের মত ভালোভাবে সিদ্ধ করে নেয়ার পর খোসা ছড়িয়ে খেতে পারেন।

বাচ্চাকে দিনে মোট কয়টি কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ানো যাবে?

  • ১-৭ বছর পর্যন্ত বয়সের ক্ষেত্রে দিনে ২/৩ টি করে কোয়েলের ডিম খাওয়ানো যাবে।
  • ৮-১০ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ৩/৪ টি করে কোয়েলের ডিম খাওয়ানো যাবে।
  • ১১-১৫ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ৪/৫ টি করে কোয়েলের ডিম খাওয়ানো যাবে। এখানে যে পরিমাণটা বলেছি এটা হল সর্বোচ্চ পরিমাণ তবে সবচাইতে ভালো হবে কোয়েল পাখি ডিমের ক্ষেত্রে দিনে দুইটি এবং খুব বেশি হলে তিনটি ডিম খাওয়ানোর।

কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা

কোয়েল পাখির ডিম খেলে শরীরের সব ধরনের পুষ্টির অভাব দূর হয় ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানাবো কোয়েল পাখির ডিম সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য। কোয়েল পাখি ডিম খুবই ছোট আকৃতির হয়ে থাকে। একটি কোয়েল পাখির ডিম আনুমানিক ৯ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে। আকারে ছোট হলেও এর পুষ্টি উপাদানের কমতি নেই। চলুন তাহলে কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

  • ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ কোয়েলের ডিমে খনিজ উপাদান গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে সেলেনিয়াম। এই খনিজ উপাদানটি পোস্টেড ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। সেলেনিয়ামের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা আমাদের দেহের কোষকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সেলেনিয়াম যুক্ত খাবার রাখা উচিত সে ক্ষেত্রে কোয়েলের ডিম অনেক সহায়তা করতে পারে।
  • দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়ঃ কোয়েলের ডিমে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন এ থাকে যার ফলে দৃষ্টিশক্তি প্রখর হয় এর এন্টারোসিডেন্ট চোখের পেশীর দেখভাল করে চোখে ছানি পড়তে দেয় না চোখের বেশ কিছু সাধারণ সমস্যা দূর হয়। 
  • কোলেস্টেরলের ভারসাম্য রক্ষা করেঃ প্রচুর পরিমাণ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে এই পাখির ডিমে। এলজিএল বা বাজে কোলেস্টেরলের কার্যকারিতা থামাতে দরকার হয় এইচডিএল বা উপকারী কোলেস্টেরল। কোয়েলের ডিমের ফ্যাটের ৬০% এইচডিএল রক্ষায় ব্যয় হয় ফলে দেহে ভালো কোলেস্টেরল ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় থাকে।
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ এই কোয়েলের ডিমে পটাশিয়াম থাকাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এই খনিজ উপাদানটি রক্ত বাহিনালি এবং শিরা গুলোতে আরাম দেয় ফলে সুষ্ঠুভাবে কাজ করে। তুলনামূলকভাবে মুরগির ডিমের চাইতে কোয়েলের টিমে অনেক বেশি পটাশিয়াম রয়েছে।
  • শরীর পরিষ্কার করেঃ শরীরকে বিষমুক্ত করা অনেক জরুরী একটি বিষয়। পরিবেশের অনেক ক্ষতিকর উপাদান শরীরে রক্তের সাথে মিশে শরীর দূষণ করে দেয় আর এই সব খারাপ উপাদান রক্ত থেকে দূর করতে কোয়েলের ডিম ভীষণভাবে কাজ করে।
  • এলার্জি দূর করেঃ কোয়েলের ডিমের সাদা অংশে ওভোমিউ কয়টি প্রোটিন থাকে এটা মূলত প্রাকৃতিক অ্যান্টি অ্যালার্জি মত কাজ করে। রক্ত জমাট বাধা ও ইনফ্লামেশন সহ এলার্জির বিভিন্ন লক্ষণ থাকলে কোয়েলের ডিম খুবই উপকারী। তাই যাদের এলার্জি সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিনিয়ত কোয়েলের ডিম খেতে পারেন তবে অতিরিক্ত নয়।
  • মূত্রথলী ও কিডনিতে পাথর হতে দেয় নাঃ আপনি যদি প্রতিদিন কোয়েলের ডিম খাওয়া অভ্যাসে পরিণত করেন তাহলে আপনার কখনো মূত্রথলিত এবং কিডনিতে পাথর হবে না। এই কোয়েলের ডিম মন্ত্রথলি এবং কিডনিতে পাথর হওয়া থেকে বাধা সৃষ্টি করে।
  • শরীরে আয়রনের অভাব দূর করেঃ শরীরে আয়রনের অভাব হলে রক্তশূন্যতা ও অ্যানিমিয়া দেখা যায় ফলে অল্প কাজেই ক্লান্তি অনুভব এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই শরীরে আয়রনের অভাব দূর করতে কোয়েলের ডিমে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
  • মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতা নিশ্চিত করেঃ আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ ও স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন বি-১২ এবং রিবোফ্লাভিন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনীয় ভিটামিন বি-১২ আমাদের শরীরে শক্তি যোগায় তাই ভিটামিন বি-১২ পাওয়ার একটি ভালো উৎস হলো কোয়েলের ডিম কেননা কোয়েলের ডিমে ভিটামিন বি-১২ এবং রিবোফ্লাভিন রয়েছে।
  • লিভার, ত্বক, চুল ও চোখে সুরক্ষা দেয়ঃ রিবোফ্লাভিন আমাদের লিভার, ত্বক, চুল ও চোখের সুস্থতা নিশ্চিত করে। শরীরের লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনেও রিবোফ্লাভিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কুয়েলের ডিম আকারে ছোট হলেও এতে প্রচুর পরিমানে রিবোফ্লাভিন রয়েছে। তাই এক এর অধিক নিয়মিত কোয়েলের ডিম খেলে লিভার, ত্বক, চুল ও চোখ সুস্থ থাকে।
  • হার্ট সুস্থ রাখেঃ কোয়েল পাখির ডিমে ৬০ শতাংশ এইচডিএল ফ্যাট আছে যাকে উপকারী কোলেস্টেরল বলা হয়। এই উপাদানটি হার্টকে সুস্থ রাখে এবং হার্টের ক্রিয়ায় কোন প্রকার বাধা সৃষ্টি যাতে না হয় সে দিক থেকে সুরক্ষা রাখে।
  • শরীরের কর্মদক্ষতা বাড়ায়ঃ কোয়েলের টিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন এবং অ্যামাইনো এসিড যা শরীরের সব ধরনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পূরণ করে এবং শরীরের কর্মদক্ষতা বাড়ায়।
  • শিশুদের জন্য উপকারঃ শিশুদের জন্য কোয়েলের ডিম অত্যন্ত উপকারী। শিশুদেরকে যদি এই ডিম প্রতিনিয়ত একটি থেকে দুইটি করে খাওয়ানো হয় তাহলে শিশুর শারীরিক, মানসিক বুদ্ধিমতা বিকাশ ঘটবে এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে তাই আপনার শিশুকে প্রতিদিন কোয়েলের ডিম খাওয়ানোর অভ্যাস করুন।
  • গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করেঃ আপনার যদি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে এর ঘরোয়া সমাধান হচ্ছে কোয়েলের ডিম নিয়মিত খাওয়া কেননা কোয়েলের ডিমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং হজম শক্তি বাড়ায়।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারীঃ আমাদের দেশে প্রায়ই মানুষেরই একটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে ডায়াবেটিস যা সব সময় ওঠা নামা করে অর্থাৎ কখনো বাড়ে অথবা কখনো কমে। চীনে কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।

কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিক

কোয়েল পাখির ডিমে অসংখ্য উপকারিতা থাকলেও কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে যা এ অংশে আপনাদের সাথে আলোচনা করব। কোলেস্টেরলের সমস্যা বাড়ায় এই কোয়েল পাখির ডিম। কোয়েল পাখির ১০০ গ্রাম ডিমে ৮৪৪ গ্রাম কোলেস্টেরল যা অন্যান্য ডিমের তুলনায় অনেক বেশি। তাই যাদের কোলেস্টেরলের সমস্যা রয়েছে তারা অতিরিক্ত কোয়েলের ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

আরো পড়ুনঃ শিশুদের জিংক সিরাপ এর উপকারিতা

যারা ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের রোগী আছেন তাদের যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে তাহলে কোয়েলের ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন কারণ কোয়েলের ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট রয়েছে যার ফলে এই হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস রোগীদের সমস্যা আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে।

এছাড়া আপনারা যারা অতিরিক্ত কোয়েল পাখির ডিম খেয়ে ফেলেন তাদেরকে বলব অতিরিক্ত কোয়েলের ডিম খাওয়া একদমই উচিত নয় কারণ কোন জিনিস অতিরিক্ত খাওয়া কখনোই ভালো নয় তাই প্রতিদিন প্রাপ্তবয়স্ক হলে তিন থেকে চারটি খেতে পারেন এবং ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে একটি থেকে দুইটি খাওয়াই ভালো।

গর্ভাবস্থায় কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা

শিশু সঠিক বৃদ্ধির জন্য দরকার গর্ভাবস্থায় মায়ের সুষম খাবার নিশ্চিত করা। গর্ভাবস্থায় শিশু পুরোপুরি একজন মায়ের উপর নির্ভরশীল কেননা শিশু তার দেহের ও মস্তিষ্কের সুস্থ গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উৎপাদন তার মায়ের শরীর থেকে গ্রহণ করে থাকে তাই গর্ভাবস্থায় খাদ্য তালিকায় দিতে হবে বিশেষ গুরুত্ব। 

প্রিয় পাঠক আজ আপনাদের জানাবো গর্ভাবস্থায় খাদ্য তালিকায় কুয়েলের ডিম কেন রাখবেন কোয়েলের ডিম শিশুর বিকাশে কিরূপ প্রভাব ফেলে এবং গর্ভাবস্থায় কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা কি কি সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাবো।

  • শিশুর জন্মগত ত্রুটি কামাইঃ সহজলভ্য ও সারা বছর জুড়েই পাওয়া যায় কুয়েলের ডিম। খাদ্য তালিকায় ডিম রাখলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহের পাশাপাশি ফলিক অ্যাসিডেরও যোগান দেয়। আকারে একটি বড় ডিমে আট মাইক্রগ্রাম ফলিক অ্যাসিড থাকে। একজন গর্ভবতী মা যদি প্রতিদিন দুটি করে সিদ্ধ ডিম খান তাহলে তার দৈনিক ফলিক অ্যাসিডের চাহিদার ৮% পূরণ হয়।
  • গর্ভকালীন সমস্যা নিরাময় করেঃ গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি, অবসন্নতাবোধ, গা গুলানো এ সবই কমন সমস্যা। ডিমে রয়েছে ভিটামিন বি-১২ যা সহজে ক্লান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করবে এবং শরীরের শক্তি থাকবে দীর্ঘ সময় ধরে। তাছাড়া কোয়েলের ডিমে রয়েছে ভিটামিন এ যা আপনার চোখের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখবে।
  • শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করেঃ ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমানে কোলাইন যৌগ যা গর্ভাবস্থায় অনাগত সন্তানের মস্তিষ্কের বিকাশ সহ আমাদের মস্তিষ্কে নিউরোটাস মিটার হিসেবে কাজ করে এবং যকৃত ও স্নায়ুতন্ত্র নিয়ন্ত্রণে রাখে। একজন মা হিসেবে আপনার গর্ভাবস্থায় শিশুর সকল প্রকার পুষ্টি যোগান আপনাকেই দিতে হবে। তাই গর্ভাবস্থায় খাদ্য তালিকায় কোয়েলের ডিমের পাশাপাশি সুষম খাদ্য রাখুন।
  • ভালো কোলেস্টেরলের প্রাকৃতিক উৎসঃ রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে আমরা চিন্তায় থাকি। দুই ধরনের কোলেস্টেরল রয়েছে LDL এবং HDL. LDL হল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এবং HDL হল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকার কোলেস্টেরল যা কোয়েলের ডিমে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে।

কোয়েল পাখির ডিমে কি এলার্জি আছে

অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন কোয়েল পাখির ডিমে কি এলার্জি আছে অথবা কোয়েল পাখির ডিম খেলে কি এলার্জি সমস্যা সৃষ্টি হয় এর উত্তর হচ্ছে না। কোয়েল পাখির ডিমে এলার্জি নেই বরং আপনি যদি প্রতিদিন কোয়েল পাখির ডিম খান তাহলে আপনার যদি এলার্জি সমস্যা থেকে থাকে তাহলে সেটা দূর হয়ে যাবে কেননা কোয়েল পাখির ডিম এলার্জি নিরাময় বিশেষভাবে কাজ করে।

কোয়েল পাখির ডিম প্রতিদিন কয়টা খাওয়া যায়

শরীরের প্রয়োজনীয় সব ধরনের ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যামিনো এসিড কোয়েলের ডিমে বিদ্যমান যা কিনা শরীরের জন্য খুবই দরকার কোয়েলের ডিম কোন কোন দেশে তো মেডিসিন হিসাবেও ব্যবহার করা হয়। প্রতিদিন কোয়েলের ডিম খেলে হার্টের কার্যক্ষমতা উন্নত হবে এছাড়া কিডনি, লিভারের কার্যক্ষমতা ও হজম শক্তি বাড়বে।

আরো পড়ুনঃ মুখে এলার্জি দূর করার ক্রিম ও সাবান

বাচ্চাদের অবশ্যই কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ানো উচিত কারণ কোয়েলের ডিম ব্রেইন সবসময় সতেজ রাখে এবং স্মৃতিশক্তিও ভালো রাখে। বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিক এবং বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে এই ডিম। দুর্বল বাচ্চা থেকে বৃদ্ধরা প্রতিদিন ৩ থেকে ৪টা করে কোয়েলের ডিম খেতে পারেন তবে শিশুদের দুইটি ডিম দেওয়া যথেষ্ট। শাকসবজি সাথে কোয়েলের ডিম সিদ্ধ করে মিশিয়ে সপ্তাহে দুই দিন গরমের সময় এবং শীতে তিন থেকে পাঁচ দিন খাওয়া যেতে পারে।

কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টিগুণ

আমরা অনেকেই কোয়েলের ডিম বেশ পছন্দ করি কিন্তু এই ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অনেকেই জানি না যারা জানতে আগ্রহী তাদের জন্যই আমাদের আজকের আলোচনা। পৃথিবীতে যত ধরনের খাদ্য ডিম রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে উপযোগী এবং পুষ্টিকর ডিম হচ্ছে কোয়েলের ডিম। কোয়েল পাখির ডিমে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে তার তালিকা নিচে দেওয়া হলঃ-

পুষ্টি উপাদানপরিমাণ
ফ্যাট১ গ্রাম
ক্যালোরি১৪ গ্রাম
ফলিক এসিড৮ মাইক্রগ্রাম
কোলেস্টেরল৭৬ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম১২.৭ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম১২ মিলিগ্রাম
আমিষ ১ মিলিগ্রাম
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড৪ মিলিগ্রাম
ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড৮৪ মিলিগ্রাম
প্রোটিন১.২  গ্রাম
সেলেনিয়াম৪%
ফসফরাস২%
ভিটামিন বি-১২২%
রিবোফ্লাভিন৪%
ভিটামিন এ১%
প্যানথনিক অ্যাসিড২%
আয়রন২%

আমাদের শেষ কথা

প্রিয় বন্ধুগণ আজকের এই আর্টিকেলে কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি যদি প্রতিদিন কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া শুরু করেন তাহলে কি কি উপকার পাবেন তা ইতিমধ্যে জেনে গেছেন আর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা সেটি হচ্ছে আপনি কখনোই অতিরিক্ত পাখির ডিম খাবেন না কেননা এটি উপকারের চাইতে ক্ষতি ডেকে আনবে।

তাই পরিমাণ মতো কোয়েলের ডিম খেতে পারেন এতে স্বাস্থ্যের বহু উপকারিতা রয়েছে। আশা করি আজকের এই আর্টিকেল পোস্টটি আপনি সম্পূর্ণ পড়েছেন। আপনার যদি কোন মতামত এবং প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করে আমাদেরকে জানাতে পারেন ধন্যবাদ।

Leave a Comment