সিজারের পর শোয়ার নিয়ম - সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায়

আজকের এই আর্টিকেলে সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায় এবং সিজারের পর শোয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব। একজন মায়ের জন্য সিজারের অপারেশন টা খুবই কঠিন কারণ শিশুকে দেখার পাশাপাশি নিজেকেও দেখার প্রয়োজন পড়ে তাই শরীরের অযত্নর কারণে হতে পারে মারাত্মক ঝুঁকি সেজন্য সিজারের পর শোয়ার নিয়ম এবং কিভাবে সিজারের পর সেলাইয়ের যত্ন নিবেন সে সম্পর্কে জানা দরকার।
আপনি যদি একজন মা হয়ে থাকেন সিজার করেছেন বা সিজার করার পরিকল্পনা করে থাকেন তাহলে সিজারের পর শোয়ার নিয়ম এবং কিভাবে সিজারের পর সেলাইয়ের যত্ন নিবেন সেই সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই চলুন সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায় এবং সেলাই এর যত্ন নিয়ে কিভাবে দ্রুত সুস্থ হবেন সকল খুঁটিনাটি বিষয় জেনে নেওয়া যাক।
পোস্ট সূচীপত্রঃ

ভূমিকা

একজন মা যখন প্রথমবার গর্ভবতী হয় তখন তার মনে অনেক রকমের প্রশ্ন এবং ভয় কাজ করে। আর এই অবস্থায় মনের ভিতরে নানা রকম প্রশ্ন আসা এবং ভয় ভীতি থাকা এটি একটি সাধারণ বিষয় এটি মূলত প্রতিটি মায়ের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। সিজারের পর একজন মায়ের বাচ্চার যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি নিজের যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে সেজন্য সিজার অপারেশনের পর কিছু নিয়ম মানা খুবই জরুরী।

সিজার অপারেশন অনেকেই হালকা ভাবলেও এটিকে অবহেলা করা যাবে না। এটি যদি অবহেলা করা হয় তাহলে সিজারের পর বিভিন্ন ইনফেকশন হয়ে মায়ের শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর সিজারের পর শোয়ার নিয়ম জেনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

তাই এই পোস্টে সিজারের পর শোয়ার নিয়ম এবং সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায় ও সিজারের সেলাই শুকানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি যদি সিজার করার পর শোয়ার নিয়ম এবং কিভাবে দ্রুত ক্ষত শুকানো যায় তা জেনে না থাকেন তাহলে এই পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন আশা করছি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

সিজারের পর শোয়ার নিয়ম

সিজারের পর পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন হয় কারণ পর্যাপ্ত ঘুম ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরে ক্লান্তি দূর করে কিন্তু সিজারের পর এবং শিশুর জন্মের পর মায়েরা ঠিক মতন ঘুমাতে পারে না। এবং অনেক মা-বোনেরা আছেন যারা কিভাবে ঘুমালে ক্ষতস্থানটি দ্রুত ভালো হয়ে যাবে কোন পাশে ঘুমালে ভালো হয় এসব নিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন 

তাই এই অংশে আমরা সিজারের পর শোয়ার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব। সিজারের পর কখনো কখনো অথবা গর্ভকালীন সময়ে মহিলাদের হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধির ও পেট বৃদ্ধি কারণে শ্বাসনালী সহজে কাজ করতে পারে না তাই সঠিকভাবে ঘুমাতে পারে না। 
যদিও সিজারের পর ব্যথা দূর করতে ডাক্তারেরা কিছু ওষুধ দিয়ে থাকে সেই ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ফলে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে সহায়তা করে তাও সিজারের পর একটি উপযুক্ত ঘুমের অবস্থান নির্বাচন করা প্রয়োজন যাতে ভালোমতো শ্বাস নিতে পারে এবং শ্বাসনালী ঠিকমতো যাতে কাজ করে।  
 
প্রথমত আপনি চিৎ হয়ে ঘুমাতে পারেন যার ফলে আপনার কাটা স্থানটি কোন চাপের মুখে থাকবে না এবং প্রচুর মহিলা সিজারের পর চিৎ হয়ে ঘুমানোকে আরামদায়ক হিসেবে জানান। এছাড়াও আপনি ডান ও বাম পাশ ফিরে ঘুমাতে পারেন এতে স্বাচ্ছন্দ বোধ ঘুমাতে পারেন এবং বাম পাশ ফিরে ঘুমালে হজম শক্তি এবং রক্ত প্রবাহ বাড়াতে সহায়তা করে।

সিজারের সেলাই শুকানোর উপায়

সিজারের ক্ষত জায়গাটি ১০ থেকে ১৫ সেমি লম্বা হয়ে থাকে। সিজারের পর আপনার ক্ষত অর্থাৎ সেলাই জায়গাটির যত্ন নেওয়া উচিত কারণ আপনি যদি এটি অবহেলা করেন তাহলে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে এছাড়াও শাস্তির নানা ধরনের ঝুঁকি হতে পারে তাই সব মা বোনের উচিত সেজারের পর দ্রুত সিজারের সেলাই শুকানোর উপায় গুলো সম্পর্কে জানা। 

তাই এই অংশে আমরা প্রথমেই সিজারের সেলাই শুকানোর কিছু উপায় আপনাদের জানাবো যার দ্বারা খুব সহজেই ঘরোয়া উপায় সিজারের সেলাই শুকাতে পারবেন। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক সিজারের সেলাই শুকানোর উপায় উপায়গুলি। সিজারের পর যখন হাসপাতাল থেকে আপনি ছাড়া পান তখন আপনার ক্ষত জায়গাতে ড্রেসিং করা হয় যাতে আপনি বাড়িতে আরাম ময় থাকতে পারেন।

কিছু কিছু সময় গোসল করার প্রয়োজন পড়ে তাই গোসল করার সময় সেলায়ের জায়গাটি শুকনো রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ আপনি যদি সেলাই জায়গাটি ভেজা স্যতসেতে করে রাখেন তাহলে ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হবে তাই আমাদের সেলাই জায়গাটি শুকনো রাখা উচিত।

গোসল করার সময় একটি গন্ধহীন এবং যেটাতে পতি নেই এরকম সাবান ব্যবহার করুন। সেলাইয়ের ওপরে জায়গা পেটে সাবান ব্যবহার করতে পারবেন তবে ঘষবেন না কারণ সাবান ঘষলে আপনার সেলাই জায়গাটি আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে এবং রক্ত বের হতে পারে। 

একটি নরম ভেজা তোয়ালা ব্যবহার করতে পারেন যা আপনার সেলাইয়ের উপরের এবং নিচের পেটের অংশ ভেজা  তোয়ালা দিয়ে সুন্দরভাবে মুছে ফেলতে পারবেন তবে খেয়াল রাখবেন কোন ঘুষণ যাতে না লাগে এবং আপনি যখন শরীরে পেটে পানি দিবেন তখন খেয়াল রাখবেন ক্ষত জায়গায় সরাসরি পানি যাতে না লাগে।

সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায়

যদি শরীরের সাথে মিশে না যায় এমন সুতা সেলাইয়ের জন্য ব্যবহার করা হয় সে ক্ষেত্রে সিজারের পর ৫ থেকে ৭ দিন পরই সেলাইটি খুলে ফেলা হয়। এবং সেই জায়গাটি ভালোভাবে ড্রেসিং করে দেয়া হয়। যদি দেখেন সেলাই জায়গাটিতে ছোট ছোট টুকরো দেখা যাচ্ছে 

সেক্ষেত্রে হাত দিয়ে টান দিবেন না যদি ঢিলা ঢালা কাপড় পড়ে থাকেন এবং সেই কাপড়ে ধরেছে তাহলে আস্তে করে ছুটিয়ে নিবেন এবং একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। আশা করি সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায় সেটা বুঝতে পেরেছেন।

সিজারের পর বেল্ট পরার নিয়ম

এই অংশে আপনাদের জানাবো সিজারের পর বেল্ট পরার নিয়ম এবং কখন বেল্ট ব্যবহার করা যাবে না সে সম্পর্কে। গর্ভাবস্থায় বাড়তি ওজন পরে কমেনা। আমরা সবাই জানি অতিরিক্ত ওজন কমাতে পরিশ্রম এবং ব্যায়াম করতে হয় যা সিজারের পর করা যায় না। অনেকেই আছেন যারা সিজারের পর ওজন কমাতে বেল্ট পড়েন এবার জেনে নেওয়া যাক।

বেল্ট পড়ার সঠিক নিয়ম, কিভাবে বেল্ট করবেন এবং সিজারের পর বেল্ট পরার নিয়ম সম্পর্কে। সিজারের পর বেল্ট ব্যবহার করার আগে কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে আপনাকে উপযুক্ত আকারের বেল্ট ব্যবহার করতে হবে এবং এমন ভাবে বেল্ট টাকে পড়ুন যাতে এটি আলগা অথবা শক্ত না হয়।খাওয়ার আধাঘন্টা পর বেল্টটি পড়ুন। 

ঘুমোতে বা গোসল করতে বাইরে যাবেন না প্লাস্টিক ফাইবার বেল্ট ব্যবহার করুন। বেল্ট ভিজে গেলে ভেজা বেল্ট পড়বেন না। বেল্ট ছাড়াও আপনি চর্বি কমাতে পারেন তা হলেও সিজারের পর মেদ কমাতে ৬ মাস পর্যন্ত আপনার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো এবং বেশি করে পানি পান করতে হবে এতে আপনার সব সময় পেট ভরা থাকবে। 

এবং আপনার ক্ষুধা কম লাগবে। প্রসাব হওয়ার কয়েক মাস পরে হালকা ভাবে ব্যায়াম করা উচিত এতে পেটে অতিরিক্ত চর্বি জ্বলতে পারবেনা এছাড়াও প্রচুর শাকসবজি খান।

সিজারের কতদিন পর ভারী কাজ করা যায়

অনেক মায়েরা প্রশ্ন করে থাকেন সিজারের কতদিন পর ভারী কাজ, সাইকেল চালানো, দৌড়ানো, ব্যায়াম করা যায়। সাধারণত সিজারের পরে ৪৫ দিন পরে সেলাই জায়গাটাতে জোড়া লেগে যাই তাই কিছুটা কাজকর্ম করা যায় তবে ৩ মাস পর ভারী কাজ গুলো করতে পারবেন। এবং দৌড়ানো এবং ব্যায়াম করা এইসবের কাজগুলোর ক্ষেত্রে সিজারের ছয় মাস পর করতে পারবেন। 

সিজারের পর সেলাইয়ের যত্ন কিভাবে নিবেন

প্রসবকালীন সংকটে বা ব্যক্তিগত কারণেই হোক না কেন যখন আপনাকে সিজারিয়ান সেকশন বেছে নিতে হয় তখন বড় অস্ত্রোপচার রূপেই পরিণত হয় কারণ অস্ত্রোপচার পেট কেটে আপনার শিশুটিকে বের করা হয়
তাই সিজারের পর বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয় যাতে আপনার ক্ষত দূরত্ব সেরে যাই এবং আপনি সি সেকশনের ঝুঁকি থেকে বেঁচে যেতে পারেন। চলুন তাহলে সিজারের পর সেলাইয়ের যত্ন কিভাবে নিবেন সেটা জেনে নেওয়া যাক।
  • প্রতিদিন ধিরস্থির সাথে কত স্থান জায়গাটি পরিষ্কার করুন।
  • ক্ষত স্থান জায়গাটি শুকনো রাখুন।
  • আরামদায়ক এবং নরম কাপড় পড়ুন।
  • ঝাকুনি, হাঁচি, কাশি এছাড়াও বিছানা থেকে নামার সময় সর্বদা ক্ষতস্থান বাঁচিয়ে রাখুন যাতে কোন চাপ না লাগে।
  • ক্ষতস্থানে গরম শেক এবং হেটিং ব্যাগ রাখুন যাতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে হলে তাড়াতাড়ি সেরে উঠব।
  • ঢিলাঢালা কাপড় পড়ুন।
  • বিভিন্ন রকম সংক্রমণ এবং ইনফেকশনের লক্ষণ গুলি জন্য সতর্ক থাকুন।

সিজারের পর শোয়ার নিয়ম সম্পর্কে শেষ কথা

সিজারের পর একজন মায়ের যত্ন নেওয়াটা খুবই জরুরী কারণ নরমাল ডেলিভারির চাইতে আরামদায়ক হলেও এই সিজারিয়ান অপারেশনটা খুবই কষ্টদায়ক কারণ একজন মা তার নিজের শরীর যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি বাচ্চারও যত্ন নিতে হয়। আজকেরে এই আর্টিকেলে সিজারের পর শোয়ার নিয়ম এবং সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আপনাদের জানিয়েছি। 

আশা করি আপনি পোস্টটি পরে উপকৃত হয়েছেন পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন। আর আপনার যদি কোন প্রশ্ন বা মতামত থেকে থাকে তবে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Edu 360 BD নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url