মেট্রোনিডাজল কিসের ওষুধ, খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলে মেট্রোনিডাজল কিসের ওষুধ ও মেট্রোনিডাজল ৪০০ খাওয়ার নিয়ম এবং মেট্রোনিডাজল এর উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করব। এই মেট্রোনিডাজল ওষুধটি ৩২টি রোগের প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করে থাকে। আপনি যদি মেট্রোনিডাজল কিসের ওষুধ না জেনে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
মেট্রোনিডাজল কিসের ওষুধ, খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
এই পোস্টটি পড়লে আপনি মেট্রোনিডাজল কিসের ওষুধ ও মেট্রোনিডাজল এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। অনেকে রয়েছে যারা মেট্রোনিডাজল ৪০০ খাওয়ার নিয়ম জানেনা আর ওষুধ খাওয়ার নিয়ম না জানলে ওষুধ ঠিকমতো কাজ করবে না তাই মেট্রোনিডাজল ৪০০ এর কাজ কি, উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম খুঁটিনাটি বিষয়ে জানতে হলে আজকের এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ

ভূমিকা

আমরা অনেকেই অনেক রকমের ওষুধ খেয়ে থাকি নিয়মিত কিন্তু অনেকেই রয়েছেন যারা মেট্রোনিডাজল অথবা মেট্রোনিডাজল (৪০০ মি.গ্রা.) খেয়ে থাকেন কিন্তু এই মেট্রোনিডাজল কিসের ওষুধ এবং মেট্রোনিডাজল এর উপকারিতা কি তা আমরা অনেকেই জানিনা। তাই প্রিয় পাঠক বিন্দু আজকের এই আর্টিকেলটি আপনি যদি সম্পূর্ণ পড়েন তাহলে মেট্রোনিডাজল নিয়ে আপনার মনে আর কোন প্রশ্ন থাকবে না।

মেট্রোনিডাজল কিসের ওষুধ

মেট্রোনিডাজল ৪০০ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানার আগে আপনাকে প্রথমে মেট্রোনিডাজল কিসের ওষুধ এবং এর কাজ কি সে সম্পর্কে জানতে হবে। মেট্রোনিডাজল এটি একটি এন্টিবায়োটিক ওষুধ। এই ওষুধটি ৩২ টি রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে মেট্রোনিডাজল ৪০০ ট্যাবলেট , ফ্ল্যাগিওল এবং অন্যান্য ব্র্যান্ড নামে বিক্রি হয়ে থাকে। 
আমাশয়, ইনফেকশন ও জরায়ুতে প্রদাহ, আমাশায়, শরীরের ভিতর ইনফেকশন, পেপটিক আলসার, নিউমেরিয়া ইত্যাদি রোগের জন্য এটি দিয়ে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। তীব্র আলসারেটিভ জিনজিভাইটিস প্রতিরোধ করতে এই মেট্রোনিডাজল ৪০০ অত্যন্ত উপকারী।

এছাড়াও অন্যান্য এন্টিবায়োটিক সেবন করার ফলে শরীরে যদি কোন সমস্যা সৃষ্টি হয় সে ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানে এই ওষুধটি ব্যবহার করা যেতে পারে। দাতে ব্যথা বা কোন ইনফেকশন হলে মেট্রোনিডাজল
দিয়ে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।

মেট্রোনিডাজল এর উপকারিতা

মেট্রোনিডাজল অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ যেটা কিনা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন ক্ষেত্রে মেইনলি ব্যবহার করে থাকেন ডক্টররা। তবে আমাদের শরীরে যখন ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হয় তার ফলে বিভিন্ন রকম রোগের উৎপত্তি ঘটে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যেটি হল পেটের সমস্যায় ডক্টররা দিয়ে থাকেন এছাড়া অতিরিক্ত পরিমাণ গ্যাস ও এসিডিটির ফলে ডায়রিয়া দেখা দেয় সেই ক্ষেত্রে কিন্তু মেট্রোনিডাজল খুবই কার্যকরী একটি ওষুধ।

এর পাশাপাশি দাঁতের কোনরকম সমস্যা দাঁতের মাড়িতে কোনরকম ভাবে ইনফেকশন হয়ে গেছে সে ক্ষেত্রে কিন্তু মেট্রোলিডাজল ট্যাবলেটটা ডেন্টিস্ট ডক্টররাও দিয়ে থাকেন এবং মহিলাদের ইউরিনারি ট্রাক ইনফেকশন ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত করা হয়। পাশাপাশি ডক্টররা কিছু কিছু অপারেশন প্রেসেন্টের ক্ষেত্রে যখন ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন দেখা দেয় তখন ইনফেকশন রোধ করতে এই মেট্রোনিডাজল ট্যাবলেটটি ব্যবহার করে থাকে।

মেট্রোনিডাজল ৪০০ খাওয়ার নিয়ম

এবার আপনাদের মেট্রোনিডাজল ৪০০ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানাবো অনেকে আছেন মেট্রোনিডাজল খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানেন না। এই ওষুধটি সাধারণ ওষুধের মতনই মুখে দিয়ে পানি দিয়ে গিলে খেতে হবে এই ওষুধটি গুড়া করে বা চুষে খাওয়া যাবেনা। 

এই ওষুধটি ডোজ হল সকাল, দুপুর এবং রাতে এবং গর্ভাবস্থায় এই ওষুধটি খাওয়া যাবেনা এবং মেট্রোনিডাজল খাওয়ার পর দুই দিন শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো যাবে না। যাদের বয়স ১০ বছরের উপরে অথবা যারা প্রাপ্তবয়স্ক আছেন তাদের ক্ষেত্রে মেট্রোনিডাজল ২০০ মিলিগ্রাম দিনে সর্বোচ্চ ৩ বার করে খাওয়ার কথা বলা হয়ে থাকে।

এবং এই ওষুধটি ৪০০ মিলিগ্রামের ক্ষেত্রে দিনে সর্বোচ্চ ২ বার করে খাওয়া যেতে পারে তবে এবং এই ওষুধটি ৩ থেকে ৭ দিন চিকিৎসকরা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে তবে এই ওষুধটি ডাক্তারের নির্দেশিকা অনুযায়ী সেবন করা উচিত কেননা একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম ডোজ হয়ে থাকে।

মেট্রোনিডাজল ৪০০ কিসের ঔষধ

মেট্রোনিডাজল এমন একটি এন্টিবেটিক ওষুধ যা ব্যাকটেরিয়া এবং প্যারাসাইট উভয়কে মারতে পারে। বিশেষ করে যে সকল ব্যাকটেরিয়া অক্সিজেন ছাড়াও বেঁচে থাকতে পারে ওই সকল ব্যাকটেরিয়াকে মারে। এই মেট্রোনিডাজল ৪০০ ওষুধটা অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে যেমনঃ অনেক অপারেশনের পরে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন রোধ করতে ব্যবহার করা হয়। 

এছাড়া আমাশয়, ডায়রিয়া এবং পেপটিক আলসার, দাঁতের ইনফেকশন ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়াল এবং প্যারাসেটিক ইনফেকশন রোধ করতে এই ওষুধটা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মেট্রোনিডাজল ৪০০ ওষুধটি ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, জেল এবং ইনজেকশন আকারে পাওয়া যায়। মেট্রোনিডাজল সিরাপ খাবার খাওয়ার ১ ঘন্টা আগে খালি পেটে খেতে হয়। 

আর ট্যাবলেট এবং ক্যাপসুল খাবার খাওয়ার পর পরে অর্থাৎ ভরা পেটে খেতে হয়। এই ওষুধটির বাইও এভেবিলিটি ৮০% থেকে ৯০% মানে ওষুধটা খাওয়ার পর আমাদের পাকস্থলী ক্ষুদ্রান্ত থেকে রক্তে ওষুধের ৮০% থেকে ৯০% পৌঁছাতে পারে।

মেট্রোনিডাজল ৪০০ এর কাজ কি

মেট্রোনিডাজল একটি অ্যান্টিবায়োটিক যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে থাকে। এই ওষুধটির উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। এই ওষুধটি ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবী সংক্রমণের প্রতিরোধের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে এছাড়াও পোকামাকার কামড়, ইনফেকশন, মাড়ি ও দাঁতের ফোড়া চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

প্রদাহ জনিত রোগ নিরাময়ের জন্য মেট্রোনিডাজল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও নিউমেনিয়া, অতিরিক্ত সাদা স্রাব, জরায়ুতে প্রদাহ, লিভার ইনফেকশন, অ্যামিবিয়াসিস, পেপটিক আলসার ইত্যাদি রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে যা নিচে উল্লেখ করা হলো
  • তীব্র আমাশয় হলে
  • পায়ের ক্ষত দূর করতে
  • অতিরিক্ত সাদা স্রাব ও জরায়ুতে প্রদাহ হলে
  • মাড়ি অথবা দাঁতে তীব্র ইনফেকশন হলে
  • তীব্র আমাশায় দূর করতে
  • লিভারে অ্যাবসেস ইনফেকশন দূর করতে
  • শরীরের ভিতরে ইনফেকশন হলে
  • ত্বকে আলসার হলে
  • পোকামাকড়ের কামড়ের জন্য
  • ঘা অথবা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনে
  • অ্যামিবিয়াসিস
  • এন্ডোকার্ডাইটিস
উপরের উল্লেখিত যে রোগগুলি আপনারা দেখতে পাচ্ছেন সেই লোকগুলো যদি আপনার ভিতরে থেকে থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মেট্রোনিডাজল সেবন করতে পারেন।

মেট্রোনিডাজল খাওয়ার আগে না পরে

মেট্রোনিডাজল খাওয়ার আগে খেতে হয় না পরে খেতে হয় এটা নিয়ে অনেকেই কনফিউজ হয়ে যান। এটি যেহেতু একটি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ তাই খাওয়ার পরে খেতে হবে অর্থাৎ আপনি যদি সকাল দুপুর রাত যখনই খান না কেন ভরা পেটে এই ওষুধটি সেবন করতে হবে। 

আপনি যদি এই ওষুধটি ভরা পেটে সেবন না করেন তাহলে পেট খারাপ সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে তাই খাবার খাওয়ার ১ ঘন্টা অথবা ২ ঘন্টা পরে এই ওষুধটি খাওয়া যেতে পারে। আপনি যদি ডাক্তারের নির্দেশিকা অনুযায়ী ওষুধটি সঠিক সময়ে সেবন করেন তাহলে আপনার অসুস্থতা দূরত্ব দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

মেট্রোনিডাজল এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

যেহেতু মেট্রোনিডাজল এন্টিবায়োটিক ওষুধ তাই এই ওষুধ খাওয়ার পর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে তবে সবার ক্ষেত্রে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নাও দেখা দিতে পারে। এই ওষুধটি খাওয়ার পর যেসব পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তা নিচে দেওয়া হলঃ
  • বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব
  • কোষ্ঠকাঠিন্য
  • ডায়রিয়া
  • মাথা ঘোরা
  • মাথাব্যথা
  • মুখ অস্বাদ
  • বিষন্নতা
  • দুর্বলতা
  • চামড়ায় ফুসকুরি
  • মুখে আলসার
উপরের উল্লেখিত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি যদি দীর্ঘদিন যাবত হয়ে থাকে তাহলে মেট্রোনিডাজল খাওয়া বন্ধ করে একজন ডাক্তার দেখানো উচিত এবং যারা গর্ভবতী আছেন তারা এই ওষুধটি খাবেন না কারণ এটি এন্টিবায়োটিক ওষুধ এটি আপনার গর্ভের শিশুর ক্ষতি হতে পারে।

মেট্রোনিডাজল কত দ্রুত কাজ করে

মেট্রোনিডাজল সেবন করার ১ থেকে ২ ঘন্টা পর কাজ করতে শুরু করে কারণ এটি দ্রুত পেটের ভিতর গলে যায় এবং ৩০ মিনিট থেকে তিন ঘন্টা মধ্যে শরীরের ঘনত্বে পৌঁছায় এবং ওষুধটির ভালোভাবে কাজ করতে শুরু করে।

মেট্রোনিডাজল এর দাম

আপনারা যে কোন ফার্মেসীতে মেট্রোনিডাজল ট্যাবলেটটি পেয়ে যাবেন এর বর্তমান মূল্য হচ্ছে মেট্রোনিডাজল ২৫০ এমজি প্রতি পিস ট্যাবলেট এর দাম ১ টাকা ২৫ পয়সা এবং মেট্রোনিডাজল ৪০০ এমজি ট্যাবলেট এর দাম ১ টাকা ৭০ পয়সা এছাড়াও মেট্রোনিডাজল ৫০০ এমজি দাম প্রতি পিস ২ টাকা করে। ওষুধটি কেনার আগে ভালোভাবে মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ দেখে কিনবেন।

মেট্রোনিডাজল কিসের ওষুধ সম্পর্কে শেষ কথা

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা এই ওষুধটি খাওয়ার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন কারণ ইন্টারনেটে ওষুধ দেখে এবং ওষুধের খাওয়ার নিয়ম গুলি দেখে কখনোই ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা মেট্রোনিডাজল কিসের ওষুধ এবং মেট্রোনিডাজল এর উপকারিতা ও মেট্রোনিডাজল ৪০০ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। 

আশা করি আপনি পোস্টটি পড়েছেন পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করে দিবেন। আরও নতুন কিছু তথ্য জানতে হলে আমাদের ওয়েবসাইটটি প্রতিনিয়ত ভিজিট করুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Edu 360 BD নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url