আলসার কত দিনে ভালো হয় ও কী খেলে ভাল হয় জানুন

আলসার আমাদের দেশে খুব কমন একটি রোগ হয়ে উঠেছে। এই রোগে যে কোন বয়সের মানুষেরই আক্রান্ত হয় তাই অনেকেরই এই আলসার নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন থাকে যেমন আলসার কত দিনে ভালো হয় এবং কী খেলে আলসার ভাল হয় ইত্যাদি সম্পর্কে। আপনিও যদি তাদের মধ্যে একজন হয়ে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি পোস্টটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
আলসার কত দিনে ভালো হয় ও কী খেলে আলসার ভাল হয় জানুন
এই আর্টিকেলে আলসার কত দিনে ভালো হয় এবং কী খেলে আলসার ভাল হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো এর পাশাপাশি আলসার হলে কি হয় ও আলসার হলে কি খাব না এছাড়াও আরো অনেক বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব তাই আলসার সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য জানতে হলে এই আর্টিকেল পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ

ভূমিকা

এক কথায় বলতে গেলে আলসার হচ্ছে এক ধরনের ক্ষত যা পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশে হয়ে থাকে এই ক্ষত হলে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। পরিপাকতন্ত্রে এসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে এই আলসার রোগ হয়। এই রোগটি ছোট বড় যে কোন বয়সের মানুষের হতে পারে আর কারো যদি পরিপাকতন্ত্রে আলসার হয় আর যদি তাড়াতাড়ি চিকিৎসা গ্রহণ না করা হয় তাহলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে 

তাই আমাদের এই আলসার সম্পর্কে সচেতন থাকা খুবই জরুরী। নিচে আলসার হলে কি হয় ও কত দিনে ভালো হয় এছাড়াও কি খেলে আলসার ভালো হবে আরো অনেক বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

আলসার হলে কি হয়

যখন কোন মানুষের খাদ্যনালী অথবা পাকস্থলীতে আনসার হয় তখন এটাকে পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আলসার বলা হয়ে থাকে। এই আলসার রোগের বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে যেগুলি লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন আপনার আলসার হয়েছে। 
আলসার হলে অধিকাংশ মানুষেরই দেখা যায় পেটে ব্যথা করে অথবা পেটের উপর অংশে ব্যথা করে এবং পেটে ব্যথার সাথে সাথে বুকে বা পেটের নিচে ব্যথা ছড়িয়ে যায় তারপরে দেখা যায় বুকে অথবা পেটে ভীষণ জ্বালাপোড়া করে তারপর পেটে গ্যাস সৃষ্টি হয় চলুন তাহলে আনসারের লক্ষণ গুলো কি কি সেগুলি জেনে নেওয়া যাক।
  • পেট ব্যথা করা
  • যে কোন খাবার খাওয়ার পর বুক জ্বালাপোড়া করা
  • খাবার খাওয়ার প্রতি অরুচি
  • মাঝে মধ্যে অস্বাভাবিক ক্ষুধা লাগা
  • ঘন ঘন ঢেকুস ওঠা
  • বমি বমি ভাব হাওয়া
  • বেশিক্ষণ না খেয়ে থাকলে পেটে জ্বালাপোড়া করবে।
  • পেট ফেঁপে বা ফুলে যাওয়া।
  • টয়লেট করার সময় রক্তপাত হওয়া।
উপরের এই লক্ষণগুলি যদি আপনার মধ্যে লক্ষ্য করেন তাহলে বেশি দেরি না করে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন কেননা আপনি যদি দীর্ঘদিন যাবত এই আলসার নিয়ে বসে থাকেন তাহলে খাদ্যথলি থেকে রক্তপাত হতে পারে এছাড়াও খাদ্যথলি ফুটো হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

আলসার কত দিনে ভালো হয়

যারা আলসার রোগে ভুগছেন এবং আলসার রোগের কারণে ব্যথাই দৈনন্দিন সময় পার করছেন তারা হয়তো অনেকেই জানতে চাচ্ছেন আলসার কত দিনে ভালো হয়। এই আলসার রোগ কত দিনে ভালো হবে সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আপনার চিকিৎসার ওপর। 

আপনি যদি ডাক্তারের পরামর্শে সঠিক নিয়মে ওষুধ খান এছাড়া ধূমপান ও ব্যাথা নাশক ওষুধ সেবন করা এড়িয়ে চলেন তাহলে ১ থেকে ২ মাসের মধ্যে আলসার সাধারণত ভালো হয়ে যায় তবে আপনি যদি সঠিক নিয়মে ওষুধ সেবন না করেন এবং ধূমপান ও ব্যথা নাশক ঔষধ খাওয়া বন্ধ না করেন তাহলে এই আলসার ভালো হতে দীর্ঘদিন সময় লাগতে পারে।

কী খেলে আলসার ভাল হয়

যাদের আলসার আছে তারা অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম জিনিস না খাওয়াই ভালো। আলসারের সময় বেশি আঁশযুক্ত বা শাক খেলে পেট থেকে যাওয়া সম্ভাবনা বেশি থাকে তাই চেষ্টা করুন হালকা খাবার খাওয়া যেগুলো খুব সহজেই হজম হয়ে যায়। এই রোগের ক্ষেত্রে ইসবগুলের ভুষি, টক দই, ঘোল, মুরগির সুপ, সিদ্ধ আলু, নরম ভাত ইত্যাদি খাবার খেলে ভালো কাজে দেয়।

এছাড়াও আরো অনেক প্রাকৃতিক খাবার রয়েছে যেগুলি আপনি আপনার খাবার তালিকায় প্রতিনিয়ত খেলে আলসার রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করবে চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক কি খাবার খেলে আলসার ভালো হয়।

১. আপেলঃ আপনি যদি প্রতিদিন একটি করে আপেল খান তাহলে আপনার আলসার দূর হয়ে যাবে বলা যায় এই আপেলে রয়েছে এমন ফ্ল্যাভোনয়েড যা আলসারের ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে প্রতিরোধ করে।
২. মুলাঃ মুলাতে আঁশ রয়েছে এছাড়া হজমে বেশ সহায়ক। এই মুলা জিংক এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান চুষে নেয়। এ ছাড়া এ মুলা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর করতে এবং পাকস্থলীর প্রদাহ প্রতিরোধ করতে বেশ সহায়তা করে।

৩. ফুলকপিঃ ফুলকপিতে সালফোঁড়াফেন নামক একটি উপাদান রয়েছে যা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে। একটি গবেষণায় দেখা যায় যে কেউ যদি প্রতিদিন ২ বার করে মোট ৭ দিন ফুলকপি খায় তাহলে তার পাকস্থলীতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যাবে ৭৮%।

৪. স্ট্রবেরিঃ একটি গবেষণায় দেখা গেছে পাকস্থলী আলসারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বিশেষভাবে কাজ করে এই স্ট্রবেরি। এই স্ট্রবেরিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে আলসার থেকে রক্ষা করে কেউ যদি প্রতিদিন ১ কাপ স্ট্রবেরির জুস করে খাই তাহলে তার আলসারের ঘা দ্রুত সেরে যাবে।

৫. গাজরঃ গাজরে থাকা ভিটামিন সি বিভিন্ন রোগ দমন করতে বিশেষভাবে কাজ করে যেমন পাকস্থলীর হজম শক্তি বাড়াতে বেশ কার্যকরী। এছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন এ যা বদহজম দূর করতে ও আলসারের প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও যাদের খাদ্য হজম হতে দেরি হয় তারা গাজর খেতে পারেন এতে দ্রুত খাওয়ার হজম হয়।

৬. হলুদঃ হলুদে রয়েছে কারকিউমিন এছাড়া হলদে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আলসার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। ১ গ্লাস গরম পানির ভিতর ১ চামচ হলুদের গুঁড়া এবং ১ চামচ মধু মিশিয়ে দিনে ৩ বার খান দেখবেন খুব উপকার পাবেন।

আলসার হলে কি খাব না

পেটের আলসারকে কখনোই অবহেলা করা উচিত না কারণ পেটে আলসার হলে শরীরে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। বর্তমান সময়ে প্রচুর মানুষ এই আলসার রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তাই এই পরিস্থিতিতে সতর্ক হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আপনার আলসার হোক বা না হোক যেসব খাবার খেলে আনসারের কারণ হতে পারে সেসব খাবার কম খাওয়া উচিত। 

চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক আলসার হলে বা আলসার থেকে বাঁচতে হলে কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে সেই খাবারগুলির নাম নিচে উল্লেখ করা হলোঃ-
  • ধূমপান বা মদ খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।
  • অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা পানি খাওয়া যাবে না।
  • অতিরিক্ত চা বা কফি খাওয়া যাবে না।
  • যাদের পেটে অতিরিক্ত এসিডিটি থাকে তাদের লেবু জাতীয় ফল খাওয়া যাবে না।
  • ফ্যাট আছে এমন খাবার খাওয়া যাবেনা।
  • বেশি মসলা জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না।
  • দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া যাবেনা। 
  • গরু বা খাসির লাল মাংস খাওয়া যাবে না।

আলসার থেকে কি ক্যান্সার হয়

যেটাকে আমরা গ্যাস্ট্রিক বলি সেটাকে চিকিৎসার ভাষায় পেপটিক আলসার বলা হয়। অনেকে একটি প্রশ্ন থাকে সেটা হচ্ছে আলসার থেকে ক্যান্সার হয় কিনা এর উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ আলসার থেকে ক্যান্সার হয়। 
অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিক হওয়ার ফলে আলসার সৃষ্টি হয় আর এই আলসার যদি দীর্ঘদিন যাবত থাকে এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ না করা হয় তাহলে এই আলসার থেকে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়। তাই আলসার রোগটি হলে কখনোই এটিকে অবহেলা করবেন না তৎক্ষণিক চিকিৎসা গ্রহণ করবেন।

আলসার কি ভালো হয়

সঠিক চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করলে আলসার ভালো হয়ে যেতে পারে। কারো কারো আলসার ভালো হতে চায় না এর পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে যেমন সঠিক চিকিৎসা না গ্রহণ করা, ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন করা, সব সময় মানসিক চাপের মধ্যে থাকা ইত্যাদি।

আলসার হলে কি লেবু খাওয়া যাবে

অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন আলসার হলে লেবু খাওয়া যাবে কিনা। লেবু আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল কিন্তু যাদের আলসার রয়েছে তাদের এই লেবু খাওয়া যাবে না কারণ লেবুতে রয়েছে সাইট্রিক এসিড যা আলসারের সমস্যা আরো বাড়িয়ে তোলে এছাড়াও শরীরে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে তাই এই লেবু খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবেন।

আলসার হলে কি ডিম খাওয়া যাবে

প্রাকৃতিকভাবে যেসব খাবারে সবচেয়ে বেশি পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম হলো ডিম। অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন আলসার হলে ডিম খাওয়া যাবে কিনা এর উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ আপনি সকালে নরম করে সিদ্ধ ডিম খেতে পারেন এতে কোন সমস্যা হবে না।

লেখকের শেষ কথা

আপনি যদি আলসারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে দ্রুত সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করুন এর পাশাপাশি আমরা এই আর্টিকালে যে সমস্ত খাবার খাওয়ার কথা উল্লেখ করেছি এবং যেসব খাবার খেতে নিষেধ করেছি সেগুলো অনুসরণ করবেন ফলে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। 

আর আপনি যদি আলসার দীর্ঘদিন যাবত শরীরে পুষে রাখেন তাহলে শরীরের বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিবে এছাড়াও এটা থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে তাই কখনো এই রোগ হলে কখনো অবহেলা করবেন না।

প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেলে আলসার কত দিনে ভালো হয় ও কী খেলে আলসার ভাল হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আশা করি আপনি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়েছেন আমাদের এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অন্যদের সাথে শেয়ার করে দিবেন আর আপনার যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করতে পারেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Edu 360 BD নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url