হাঁসের ডিমের ক্ষতিকর দিক ও এলার্জি আছে কিনা জানুন

আমরা জানি যে হাঁসের ডিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা হাঁসের ডিমের ক্ষতিকর দিক গুলো সম্পর্কে এছাড়াও হাঁসের ডিমে কি এলার্জি আছে কিনা সে বিষয়ে জানিনা।তাই আজকের আর্টিকেলে হাঁসের ডিম খেলে কি প্রেসার বাড়ে এবং হাঁসের ডিমের ক্ষতিকর দিক সকল খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
হাঁসের ডিমের ক্ষতিকর দিক - হাঁসের ডিমে কি এলার্জি আছে? জেনে নিন
তাই আপনি যদি হাসির ডিম খেতে ভালোবেসে থাকেন তাহলে আপনার অবশ্যই হাঁসের ডিমের ক্ষতিকর দিক গুলো সম্পর্কে জানা উচিত কারণ আমাদের দেহে যেমন কিছু খাবারের উপকারিতা রয়েছে তেমনি খারাপ দিক রয়েছে। এবং অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে হাঁসের ডিমে কি এলার্জি আছে? এবং হাঁসের ডিম খেলে কি প্রেসার বাড়ে? এই সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন আজকের এই আর্টিকেলে। 

হাঁসের ডিম খেলে কি হয়

হাঁসের ডিম এবং মুরগির ডিম দুটোই স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। তবে হাঁসের ডিমের চাইতে মুরগির ডিম মানুষজন বেশি খেয়ে থাকে। অনেকেই আমরা মনে করে থাকি হাঁসের ডিমের চাইতে মুরগির ডিমের উপকারিতা বেশি এইটা আমাদের ভুল ধারণা। 

হাঁসের ডিমে কি কি উপকারিতা রয়েছে এবং হাঁসের ডিম খেলে কি হয় জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন তাই হাঁসের ডিম খেলে কি হয় জানতে হলে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। বর্তমানে মুরগির ডিমের সাথে হাঁসের ডিম তুলনা করতে গেলে ৫০% বড়। সাধারণত দুটি হাঁসের ডিম সমান তিনটি মুরগির ডিম হয়ে থাকে।
গবেষণা অনুসারে হাঁসের ডিমের স্বাস্থ্য উপকার গুলো বলতে গেলে প্রথমে বলতে হয় যে হাঁসের ডিম খেলে শিশুদের এবং বড়দের মস্তিষ্ক বিকাশের সহায়তা করে এবং হার্ট সুস্থ রাখে, ক্যান্সার প্রতিরোধই বেশ ভূমিকা পালন করে। 

আপনি যদি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে চান সে ক্ষেত্রে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন খাদ্য তালিকায় হাঁসের ডিম রাখুন। এই ডিম মানব দেহে হরমোন তৈরিতে বেশ সহায়তা করে থাকে। নিয়মিত হাঁসের ডিম খেলে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। হাঁসের ডিম হচ্ছে উচ্চ সমৃদ্ধ পুষ্টিকর একটি খাবার। এবং ওজন কমাতে হাসের ডিম বেশ ভূমিকা পালন করে।

হাঁসের ডিমের ক্ষতিকর দিক গুলো কি কি

অপরের আলোচনায় আমরা আসে ডিম খেলে কি হয় এবং উপকারিতা সম্পর্কে জানলাম। এখন আমরা হাঁসের ডিমের ক্ষতিকর দিক অর্থাৎ অপকারিতা সম্পর্কে জানব জানবো। 

আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে হাঁসের ডিমের আবার অপকারিতা থাকতে পারে? উত্তর হল জি হ্যাঁ। কিছু কিছু জিনিসের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি তার ক্ষতিকর দিক রয়েছে। চলুন তাহলে হাঁসের ডিমের ক্ষতিকর দিক গুলি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
  • সপ্তাহে তিন থেকে চারটির বেশি ডিম খাওয়া উচিত হবে না।
  • ডায়াবেটিস এবং বহুমূত্র রোগ হলে হাঁসের ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ এতে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেটর রয়েছে যা হৃদ রোগের জন্য ভালো নয়
  • মুরগির ডিমের চাইতে হাঁসের টিমে তিন গুণ বেশি কোলেস্টেটর রয়েছে। যাদের হৃদ রোগ এবং ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তাই হাঁসের ডিম খাওয়ার আগে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • যাদের হাঁসের মাংস এবং হাঁসের ডিমের এলার্জি রয়েছে তারা হাঁসের ডিম এবং হাঁসের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • এলার্জি প্রবণতা থাকলে ত্বকের ছোট ছোট ফুসরী এবং চুলকানি হতে পারে।
  • হাঁসের ডিম খেলে ডায়রিয়া এবং বমির মত সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং শিশুদের ক্ষেত্রেও এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • আর যারা হাঁসের ডিম খেয়ে সহ্য করতে পারেন না তারা মুরগির ডিম খেতে পারেন।
  • ঘাসের টিম খাওয়ার সময় কখনো কাঁচা খাওয়া যাবেনা। ডিমটি ধুয়ে এবং পুরোপুরি সিদ্ধ করে খেতে হবে।
  • ৫ থেকে ৭ মিনিট ডিমটি ভালোভাবে সিদ্ধ করে ভালোভাবে খোসা ছাড়িয়ে খান।
  • হাসির কাচা ডিম খেলে স্যারমূলা নামক ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে ফলে ডায়রিয়া সমস্যা দেখা দিতে পারে তাই কখনো কাঁচা ডিম খাওয়া উচিত নয়।

হাঁসের ডিম খাওয়ার নিয়ম

অনেকে আছেন যারা কিনা হাঁসের ডিম খান কিন্তু কোন উপকার পান না তার প্রধান কারণ হচ্ছে যখন তখন ডিম খাওয়া উচিত নয় হাঁসের ডিম খাওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে সেই সময় ডিমটি খেলে আপনি অনেক উপকার পাবেন। 

চলুন তাহলে হাঁসের ডিম খাওয়ার নিয়ম গুলি জেনে নেওয়া যাক। ডিম খাওয়ার উপযুক্ত সময় হিসেবে বলা যেতে পারে যে সকালে নাস্তা খাওয়ার সময় এবং দুপুরে নাস্তা খাওয়ার সময় তরকারির সাথে ডিমটি রান্না করে খেতে পারেন। আর বিশেষ করে কাচা ডিম খাবেন না দরকার ৫ থেকে ৭ মিনিট ডিমটি ভালোভাবে সিদ্ধ করে নিয়ে খোসাটি ভালোভাবে ছড়িয়ে নিয়ে খাবেন।

এবং অনেকেই রাতে ডিম খেয়ে হজম করতে পারেন না ফলে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয় যেমন গ্যাস্ট্রিক সমস্যা । তাই যারা রাতে ডিম খেয়ে হজম করতে পারছেন না তাদের রাতে ডিম না খাওয়াই ভালো। আশা করি হাঁসের ডিম খাওয়ার নিয়ম গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

হাঁসের ডিম খেলে কি রোগ হয়

হাঁসের ডিমে অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমন চোখের দৃষ্টিশক্তি যেমন আমরা চোখের জ্যোতি বলে থাকি ডিম খেলে চোখের জ্যোতিটাও বেড়ে যাই। আমাদের যে নখ পড়ে যাই এবং আমাদের হাড্ডি শক্ত করতে সাহায্য করে। 

বয়স্ক জনিত অনেক লোক রয়েছে যাদের হাত পা ফুলে যায় এর প্রধান কারণ হচ্ছে প্রোটিনের ডিফিসিয়েন্সি হয় সেক্ষেত্রে ডিমের সাদা অংশ বেশ উপকার। এছাড়াও রয়েছে হাঁসের টিমে ভিটামিন বি ১২ যা ক্যান্সার এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে রয়েছে সেলেনিয়াম যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। 

হাঁসের ডিমে কি এলার্জি আছে?

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে হাঁসের টিমে কি এলার্জি আছে? এর উত্তরটি হচ্ছে হাঁসের ডিমে এলার্জি রয়েছে তবে ডিমের কুসুমে এলার্জি নাই তার যে সাদা অংশ রয়েছে সেটাতে অ্যালার্জি রয়েছে। এছাড়াও অনেকের কোয়েলের ডিম খেলে এলাচি হয়।
এবং হাঁসের ডিম খেলেও অ্যালার্জি হয় এবং মুরগির ডিম এলার্জি হয় এসব ক্ষেত্রে প্রথমে আপনাকে নির্ণয় করতে হবে আপনার কিসের ডিমটি খেলে এলার্জি হচ্ছে তারপর সেই ডিমটি এড়িয়ে চলতে হবে। আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক যে হাঁসের ডিমের এলার্জির লক্ষণ গুলি কি কি।
  • হাঁপানি সমস্যা যেমন ফাঁসি, বুকে টান, শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা।
  • মাথা ঘুরানো সহ বমি বমি ভাব।
  • পেটে তীব্র ব্যথা।
  • হাঁচি এবং সর্দি কাশি।
  • আমবাদ বা ত্বকের প্রদাহ।
  • ত্বকে বিভিন্ন জায়গায় ফুসরি এবং চুলকানো।
ওপরের এই সমস্যাগুলো হলে আপনি জানবেন যে হাসির টিমের আপনার এলার্জি আছে।

হাঁসের ডিম খেলে কি প্রেসার বাড়ে?

হাঁসের ডিম খেলে কি পেশার বাড়ে অনেকেই এই প্রশ্নটি করে থাকে এর প্রশ্নটি হল না হাঁসের ডিম খেলে প্রেসার বাড়ে না এটা আপনার ভুল ধারণা। প্রেশার বাড়ার মূল কারণ হচ্ছে শরীরে ফ্যাট জমে গিয়েছে ফলে রক্তনালী গুলো আগের মত নেই সরু হয়ে গেছি। এবং ফ্যাট জামার মূল কারণ হচ্ছে সুগার খাবারগুলো খাওয়ার কারণে এবং ঠিকমতো ব্যায়াম না করার কারণে। 

আপনি যদি আপনার ফ্যাট কন্ট্রোল করতে পারেন তাহলে আপনার পেশার বাড়বে না ফলে আপনি নিশ্চিন্তাই ডিম খেতে পারেন তবে কিছু ডাক্তার ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে শুধু সাদা অংশ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে প্রেসারের রোগীদের। 

হাঁসের ডিম খেলে কি ঠান্ডা লাগে?

অনেকেই ধারণা করেন যে হাসের ডিম খেলে ঠান্ডা লাগে যদিও কোন চিকিৎসা গবেষণা অনুসারে কোন প্রমাণ নেই। তবে কম পরিমাণে ঘাসের ডিম খেলে কোন অসুবিধা হবে না যদি আপনি অতিরিক্ত মাত্রায় হাসের ডিম খেয়ে ফেলেন ফলে হাঁচি এবং সর্দি এলার্জি জনিত নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই পরিমাণ মতন খান এছাড়াও আপনি মুরগি বা দেশি হাঁসের ডিম খেতে পারেন।

একটি হাঁসের ডিমে কত ক্যালরি আছে

একটি হাঁসের ডিমে ১৮১ ক্যালরি রয়েছে এবং প্রোটিন পাওয়া যায় ১৩.৫ গ্রাম, ফ্যাট পাওয়া যায় ১৩.৭ গ্রা্‌ ক্যালসিয়াম ৭০ মিলিগ্রাম, লোহা এবং আয়রন রয়েছে ৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ থাকে ২৬৯ মাইক্রগ্রাম এগুলোই হচ্ছে হাঁসের ডিমের মূল পুষ্টিগুণ। 
এছাড়া হাঁসের ডিমে অন্যান্য খনিজ উপাদান তো রয়েছে। হাঁসের ডিমে ভিটামিন বি ২, ভিটামিন বি ৩, ভিটামিন বি ৫, ভিটামিন বি ৬, ভিটামিন বি ৭, ভিটামিন বি ৯, এবং ভিটামিন বি ১২ এই হল ৭ প্রকার ভিটামিন বি যা খুব সহজেই হাঁসের ডিমের মধ্যে পাওয়া যায়।

হাঁসের ডিম খেলে কি ওজন বাড়ে

উপরেরুক্ত আলোচনায় জানলেন যে একটি হাঁসের ডিমে কত ক্যালরি এবং কোন কোন ভিটামিন রয়েছে। এখন অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে হাঁসের ডিম খেলে কি ওজন বাড়ে এই ধারণাটি পুরোটাই ভুল হাঁসের ডিম খেলে আপনার ওজন বাড়ে না বরং এটি ওজন কমাতে বেশ কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। হাঁসের ডিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি রয়েছে।

এছাড়াও এমএনও এসিড রয়েছে যা আমাদের শরীরে চর্বি দূর করতে বেশ কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।এছাড়াও হাঁসের ডিমের কুসুমে কোলন যা আমাদের মেটাবলিজোম ঠিক রাখে এবং আমাদের ওজন কমাতে বেশ উপকার করে। 

লেখকের শেষ কথা

আরেকটি কথা হচ্ছে বেশি কোন কিছুই খাওয়া উচিত নয় ফলে আপনি যদি বেশি অতিরিক্ত আসে ডিম খান হলে আপনার নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারি সেগুলো আপনাদের ইতিমধ্যে হাঁসের ডিমের ক্ষতিকর দিক উক্ত আলোচনায় জানিয়েছি সেজন্য চেষ্টা করবেন সপ্তাহে তিন থেকে চারটি হাঁসের ডিম খাওয়া তার বেশি না খাওয়া এবং আপনি চাইলে মুরগির ডিম প্রতিনিয়ত গোটা সপ্তা জুড়ে খেতে পারেন। 

আজকের এই পোস্টে আমরা হাঁসের ডিমের ক্ষতিকর দিক এবং হাঁসের ডিমে কি এলার্জি আছে কিনা এছাড়াও হাঁসের ডিম খেলে কি প্রেসার বাড়ে আরো অনেক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে অন্যদের সাথে শেয়ার করে দিবেন যাতে হাসের ডিম এর অপকারিতা এবং উপকারিতা সম্পর্কে অন্যরাও জানতে পারে। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Edu 360 BD নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url