খালি পেটে চিড়া খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন

আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের সাথে খালি পেটে চিড়া খাওয়ার উপকারিতা এবং চিড়া খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। অনেকেই আছেন যারা খালি পেটে চিড়া খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানে না আপনিও যদি তাদের মধ্যে একজন হয়ে থাকেন তাহলে এই পোস্টটি পড়লে চিড়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
খালি পেটে চিড়া খাওয়ার উপকারিতা ও চিড়া খাওয়ার অপকারিতা অপকারিতা
সকালে খালি পেটে চিড়া খাওয়ার উপকারিতা অনেক রয়েছে। প্রায় মানুষই চিড়া খেয়ে থাকে কিন্তু চিড়ার উপকারিতা সম্পর্কে কারোরই তেমন একটা জানা নেই তাই এই পোস্টে খালি পেটে চিড়া খাওয়ার উপকারিতা ও চিড়া খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। তো আপনার যদি খালি পেটে চিড়া খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা না থাকে তাহলে এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচীপত্রঃ

চিরা কি কার্বোহাইড্রেট?

যাদের শরীরে পুষ্টির অভাব তারা চিড়া খেতে পারেন এটি একটি খুবই পুষ্টিকর কেননা এতে রয়েছে পুষ্টিকর কার্বোহাইড্রেট ৭০% এবং চর্বি ৩০% এছাড়া এই চিড়া খেলে শরীরে শক্তি যোগায়। ভাতে কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকলেও ভাত খেলে অনেকেরই শরীর ভারী এবং ক্লান্তি লাগে।

চিড়া খাওয়ার নিয়ম

চিরা বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালে জনপ্রিয় একটি খাবার। চিড়া তৈরিতে হয় ধান থেকে। চিড়া অনেক রকম ভাবে খাওয়া যায়। চিরা আপনি শুকনো অথবা ভিজিও খেতে পারেন যেমন দুধ, পানি এবং অন্যান্য তরল জাতীয় পদার্থ দিয়ে চিড়া ভিজিয়ে খেতে পারেন। 
বাংলাদেশের মানুষরা চিড়ার সঙ্গে দুধ এবং কলা মিশিয়ে খেতে বেশি পছন্দ করে এবং বেশিরভাগ মিষ্টির দোকানগুলোতে দই চিড়া বিক্রি করা হয়ে থাকে তাই বলা যেতে পারে এটি একটি জনপ্রিয় খাবার। এটি হজম করাও বেশ সহজ।

চিড়া খেলে কি মোটা হয়

চিড়া এবং মুড়ি খেলে শরীরে চর্বি জমে না এবং ক্ষতিকারক ক্যালরি থাকে না বিশেষ করে যারা ওজন কমাতে চান তারা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় চিড়া এবং মরি যুক্ত করতে পারে। চিড়া ও মুড়িতে লবনের পরিমাণ কম থাকায় এটি শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। অনেকেই মনে করেন যে ডায়েট করা অবস্থায় চিড়া অথবা মুড়ি খাওয়া যাবে না এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। 

চিড়া ও মরি এমন একটি খাবার যা সবারই জন্য উপকারী এটি শরীরের কোন ক্ষতি করে না বরং শরীরকে ফিট এবং রোগমুক্ত রাখতে সহায়তা করে। চিড়া ও মুড়িতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যা আমাদের দাঁতের জন্য খুবই উপকারী তাই স্বাস্থ্যকর এবং শক্তিশালী দাঁত বজায় রাখার জন্য আয়রনযুক্ত খাবার খাওয়া আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

তাই আপনার যদি শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকে অথবা দাঁতের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে কোন চিন্তা ছাড়াই আপনি চিড়া অথবা মুড়ি খেতে পারেন এছাড়াও গ্যাস্ট্রিক সমস্যা, ডায়াবেটিস, আপনার যদি অতিরিক্ত ওজন থাকে তাহলে আপনি চিড়া অথবা মুড়ি প্রতিনিয়ত খেতে পারেন এটি আপনার ডায়াবেটিস ও ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখবে পাশাপাশি পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি দিবে।

খালি পেটে চিড়া খাওয়ার উপকারিতা

চিড়া তৈরি হয় সম্পূর্ণ ধান দিয়ে এটি এমন একটি খাবার যা সহজেই হজম করা যায় এবং খাওয়া খুবই সহজ। ভাতের বদলে আপনি চিড়াও খেতে পারেন কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর কার্বোহাইড্রেট রয়েছে যা ভাতের ভিতরে রয়েছে তবে ভাতের তুলনায় চিড়া শরীরকে সুস্থ এবং ক্লান্ত মুক্ত রাখতে বেশি সহায়তা করে।

যারা দীর্ঘ সময় সমুদ্র যাত্রা করেন তাদের ক্ষেত্রে খাবারের সংকট দেখা দেয় তখন এই চিড়া অনেক উপকার করে কেননা এটি খাওয়া অনেক সহজ এবং কোন জ্বালানি লাগেনা শুকনো অথবা ভিজিয়ে চট করে খাওয়া হয়ে যায়। এই চিড়া ভিজালে চারগুণ বেড়ে যায় যেমন ২০ গ্রাম চিড়া ভেজানোর পরে সেটি ৮০ গ্রাম হয়ে যায়।
চিড়া এমন একটি খাবার যেটা যে কোন বয়সের এবং যেকোনো স্থানে খাওয়া যায়। এই চিরা খালি পেটে খেলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায় যারা জানেন না খালি পেটে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় তাদের সুবিধার্থে উপকারগুলি নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
  • নিয়মিত সকালে খালি পেটে চিড়া খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায় এটি সহজে হজম হয় ফলে শরীরে বিপাকীয় হার বাড়ে।
  • এই চিড়াই প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, আইরন এবং প্রোটিন থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
  • চিড়া একটি চর্বি মুক্ত খাবার যা আমাদের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
  • যাদের গ্যাসের সমস্যা, ডায়াবেটিস এবং পেটের নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত চিড়া খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করবে এর পাশাপাশি আপনার যদি গ্যাসের সমস্যা সহ পেটে অন্যান্য সমস্যা থেকে থাকে তাহলে ভালো হয়ে যাবে।
  • চিড়াই সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম এর মাত্রা কম থাকায় কিডনি রোগীদের জন্য চিড়া খাওয়া খুবই উপকারী।
  • চিড়ায় আসে পরিমাণ কম থাকার কারণে আলসারেটিভ কোলাইটিস, ডায়রিয়া এবং অন্ধের প্রদাহ জনিত রোগ প্রতিরোধ করতে চিড়া চমৎকার কাজ করে।

    চিড়া খাওয়ার অপকারিতা

    চিড়া খেলে স্বাস্থ্যের অনেক উপকারিতা পাওয়া যায় কিন্তু আমরা জানি যে অতিরিক্ত কোন কিছুই খাওয়া ভালো না তাই চিড়া বেশি খেলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই অংশে আমরা চিড়া খাওয়ার অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
    • চিড়া বেশি পরিমাণে খেলে শরীরের ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায় আর এই কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে গেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। 
    • যাদের হাঁপানি আছে তারা নিয়মিত চিড়া ভিজিয়ে খেলে সর্দি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে তাই ঠান্ডা থেকে বাঁচতে চিড়া ভিজিয়ে খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলুন।
    • বেশি চিড়া খাওয়ার পর যদি হজম না হয় তাহলে ফুড পয়জন এবং ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই অতিরিক্ত চিড়া খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
    • তাছাড়া চিড়াতে ট্রাইগ্লিসারহিড এর ঘনত্ব অনেক বেশি থাকে ফলে হৃদ রোগের ঝুঁকি ছাড়াও নিয়মিত বেশি চিড়া খেলে ডায়াবেটিসের সমস্যাও হতে পারে।

    ডায়াবেটিসে চিড়া খাওয়া যাবে কি

    চিড়া বাঙালির সময় অসময়ের খাবার হাতের কাছে কিছু না থাকলে চিড়া ভিজিয়ে খেলেই হয়ে গেল। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন ডায়াবেটিসে চিড়া খাওয়া যাবে কি না। ১০০ গ্রাম চিড়া থেকে আপনি শক্তি পাবেন ২৫০ ক্যালোরি থেকে ৩০০ ক্যালোরি অর্থাৎ চিড়াতে শক্তি অনেক বেশি। 

    আপনি খুব বেশি চিড়া না খেলে আপনার ওজন তেমন একটা বাড়বে না আর ওজন না বাড়লে ডায়াবেটিসের জন্য সুবিধা হবে কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে চিড়া খেলে শরীরের ওজন বাড়বে ফলে ডায়াবেটিস বাড়ার সম্ভাবনা বাড়বে। 

    এছাড়াও নিয়মিত চিড়া খেলে শরীরের ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায় এছাড়াও চিড়ায় ট্রাইগ্লিসারাইড ঘনত্ব অনেক বেশি যার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকির পাশাপাশি ডায়াবেটিস ও বাড়তে পারে তাই যারা অতিরিক্ত পরিমাণে চিড়া খান তারা বেশি চিড়া খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলুন।

    দই চিড়া খাওয়ার উপকারিতা

    চিড়ার সাথে দই এ যেন জন্ম জন্মান্তরের বন্ধন পেট ঠান্ডা করতে, শরীরে পানির অভাব পূরণ করতে একই সাথে ক্ষুধা মিটাতে চিড়ার গুরুত্ব অপরিসীম। সকালের নাস্তা বা অন্যান্য সময় হালকা খাবার যেটাই বলেন না কেন স্বাস্থ্যকর বেশি খাবার হলো দই চিড়া। হাজার হাজার মিষ্টির দোকানে সকাল হলেই ভীর হয় দই চিড়া খাওয়ার জন্য। দই চিড়া খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে যা নিচে উল্লেখ করা হলো।
    • দই চিড়া শক্তি এবং ক্যালসিয়ামের উৎস।
    • শরীরের পানি শূন্যতা এবং ক্লান্তি দূর করতে দই চিড়ার গুরুত্ব অপরিসীম।
    • এই চিড়া আমাদের শরীরে প্রোটিন এবং কার্বন-হাইড্রেটের মত প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করতে সহায়তা করে।
    • চিড়াতে সামান্য পটাশিয়াম এবং লবণ রয়েছে যা আমাদের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
    • চিড়া পেটকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। 
    • চিড়াতে প্রচুর ফাইবার রয়েছে যা ডায়রিয়ার, ডাইভার্টিকুলাইটিস, ক্রোনস ডিজিজ এবং আলসারেটিভ কোলাইটিস ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
    • চিড়া সহজেই হজম হয়ে যায়।
    • চিড়া চর্বি মুক্ত, আয়রন, ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার যাদের হজমে সমস্যা রয়েছে তারা খাবার তালিকায় দই চিড়া রাখতে পারে।
    • চিড়াই সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের মাত্রা কম থাকায় কিডনি রোগীদের জন্য চিড়া খুবই উপকারী।

    গর্ভাবস্থায় চিড়া খাওয়ার উপকারিতা

    একজন গর্ভবতী মহিলার প্রথম তিন মাসে ক্যালরির চাহিদা ২০০-৩৫০ বেড়ে যায় তবে এটি সন্তানের মায়ের ওজনের ওপর নির্ভর করে। এই সময়ে একজন গর্ভবতী মহিলার এমন খাবার খাওয়া উচিত যেগুলোতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে এবং ক্যালরি রয়েছে। 
    এই ক্যালরি ঘাটতি পূরণ করার জন্য চিড়া খেতে পারেন কেননা চিড়ায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে এছাড়াও দই, কলা, রুটি, মাখন, জাম, খেজুর, পুডিং এবং ফল এসব জাতীয় খাবারে অনেক পুষ্টি এবং ক্যালরি রয়েছে।

    চিড়া তে কত ক্যালরি আছে

    চিড়া ভিজিয়ে খেলে চার গুণ বেড়ে যায় অর্থাৎ ২০ গ্রাম চিড়া পানিতে ভেজানোর পর এটি ৮০ গ্রাম ওজন হয়ে যায় এই চিড়া সকল বয়সের মানুষ খেতে পারে এবং চিড়া ২ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন চিড়াতে কত ক্যালরি আছে? ৩৪৬ ক্যালরি আছে ১০০ গ্রাম চিড়াই এছাড়াও আমিষ আছে ৬.৬ গ্রাম ও শর্করা আছে ৭৭.৩ গ্রাম।

    খালি পেটে চিড়া খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা শেষ কথা

    আজকের এই আর্টিকেলে খালি পেটে চিড়া খাওয়ার উপকারিতা এবং চিড়া খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আশা করি আপনি পোস্টটি পড়েছেন এবং চিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনি চিড়া যেকোনো সময় খেতে পারবেন তবে অতিরিক্ত পরিমাণে সব সময় চিড়া খাবেন না কারণ কোন জিনিস অতিরিক্ত খাওয়া ভালো না।

    যদি চিড়া সম্পর্কে আপনার কিছু জানার অথবা প্রশ্ন থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করতে পারেন। এই আর্টিকেল পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অন্যদের সাথে শেয়ার করে দিবেন এবং আরো বিভিন্ন রকম তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত চোখ রাখতে পারেন ধন্যবাদ।


    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    Edu 360 BD নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url