সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ, কেন হয় ও করণীয় কি জানুন

সিজারের অপারেশনটা একটু মারাত্মক। দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য সিজারের পর শরীরে প্রতি যত্ন নেয়াটা খুবই জরুরী। শরীরের অযত্ন করলে ইনফেকশন সহ নানা রকম সমস্যা হতে পারে তাই আজকের এই আর্টিকালে সিজারের পর ইনফেকশন কেন হয় এবং সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ, করণীয় কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ, কেন হয় ও করণীয় কি জানুন
আপনি যদি একজন মা হয়ে থাকেন এবং সিজার করে থাকেন বা সিজার করার পরিকল্পনা করে থাকেন তাহলে সিজারের পর ইনফেকশন কেন হয় এবং সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

সিজারের পর শরীরের প্রতি যত্ন না নিলে এই সব মারাত্মক ইনফেকশন হতে পারে তাই এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন এই পোস্টে আমরা আপনাদের সিজারের পর ইনফেকশন হলে করণীয় কি, লক্ষণ ইনফেকশন কেন হয় সকল খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
পোস্ট সূচিপত্রঃ

ভূমিকা

বর্তমান সময়ে নরমাল ডেলিভারির চেয়ে সিজারিয়ান ডেলিভারি সংখ্যা বেশি দেখা যায়। সেই সাথে সিজারের পর ইনফেকশন এর সংখ্যা কম নয় তাই আজকের আর্টিকেলে আপনাদের জানাবো সিজারের ইনফেকশন কেন হয় এবং কি কারনে হয় প্রায় প্রতিটা গর্ভবতী মহিলাই জানতে চাই। 

সিজারে ইনফেকশন অনেক কারণে হতে পারে। আপনি যদি কিছুদিন আগে সিজার করে থাকেন বা করার পরিকল্পনা করছেন তাহলে সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ এবং সিজারের পর ইনফেকশন হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ কি কি

আজকের আর্টিকেলে আমাদের মূল বিষয় হচ্ছে সিজারের পর কেন ইনফেকশন হয় এবং লক্ষণ গুলো কি কি সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আপনাদের জানানো। এবং সিজারের পর আপনার ইনফেকশন হয়েছে কিনা কিভাবে বুঝবেন খুঁটিনাটি সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব। 

ইনফেকশনের বর্ণনা দিতে গিয়ে একজন বলেছিলেন জবাই করার কষ্ট সহ্য করা যায় কিন্তু ইনফেকশনের ড্রেসিং ও সেলাই এর কষ্ট সহ করা যায় না। কোন মহিলা যাতে সিজারের পর ইনফেকশন না হয় সেজন্য খুবই সচেতন থাকা প্রয়োজন। সিজারের পর নানা সমস্যার কারণে ইনফেকশন হতে পারে। সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।
  • সিজারের কাটা জায়গা গুলি ফুলে এবং লাল হয়ে যাওয়া।
  • কাটা জায়গা থেকে পুজ বা দুর্গন্ধ বের হওয়া।
  • পেট বা ক্ষত জায়গা প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে।
  • গায়ে জ্বর আসতে পারে এবং জ্বর জ্বর ভাব হতে পারে।
  • প্রসাব করার সময় কষ্ট হতে পারে।
  • মাসিকের রাস্তা দিয়ে রক্ত বা গন্ধযুক্ত তরল আসতে পারে।
  • গোটা শরীর ফুলেও যেতে পারে।
বর্তমান সময়ে সিজারের ডেলিভারি পর ইনফেকশন সারা পৃথিবীতে হয় অনেকে আছেন যারা ইনফেকশনের কথা শুনে ভয় পান কিন্তু ভয় পাওয়ার কিছুই নাই। কারণ ইনফেকশনের কারণে কোন মানুষ মারা যায় না তবে রোগীর জন্য অনেক কষ্টদায়ক। 

উপরের ইনফেকশনের কিছু লক্ষণ উল্লেখ করেছি যেগুলো দেখা দিলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। আশা করি সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো জানতে পেরেছেন।

সিজারের পর ইনফেকশন হলে করণীয় কি

সাধারণত অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে সিজারের পর ইনফেকশন হলে কি করবেন এবং করণীয় কি। সিজারের রোগীর জন্য আলাদা আলাদা জিনিসপত্র ব্যবহার করা উচিত এবং ডাক্তারের নির্দেশে খাবার খাওয়া উচিত। আজকের এ আর্টিকেলে এই অংশে আমরা সিজারের পর ইনফেকশন হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আপনাদের জানাবো। 
হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ , রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়া, শরীরে পুষ্টির অভাব, সিজারের পর আত্মীয়-স্বজন দেখা-সাক্ষাৎ করা এইসব কারণেও ইনফেকশন হতে পারে। তাই সিজারের পর ইনফেকশন হলে তা থেকে মুক্তির উপায় গুলো কি কি সেগুলো নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
  • সিজারের পর কাটা জায়গা ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • সিজারের সময় জীবাণুমুক্ত পানি এবং অন্যান্য জীবাণুমুক্ত জিনিসপত্র ব্যবহার করা তাহলে ইনফেকশন থেকে মুক্তি পেতে পারেন। 
  • সিজারের পর রোগীকে বেশি বেশি হাঁটাচলা করতে হবে।
  • কাটা জায়গায় ঘাম বা ময়লা জমতে দেয়া যাবে না।
  • ঠিকমতো পানি খেতে হবে যাতে প্রস্রাব ঠিকমতো হয়।
  • সুষম খাওয়ার যুক্ত খাবার খেতে হবে এবং বেশি বেশি শাকসবজি খেতে হবে। এছাড়াও ভিটামিন সি যুক্ত ফল খেতে হবে যেমন মালটা, আমলকি, কমলা লেবু।
  • মিনিমাম ৬ সপ্তাহ স*হবাস করা থেকে দূরে থাকতে হবে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য হয় এমন খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে যাতে কাটা জায়গায় কোন চাপ না পরে।
  • যেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি আছে সেই সব খাবার খেতে হবে।

সিজারের পর ইনফেকশন কেন হয়

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে নরমাল ডেলিভারি চাইতে সিজারিয়ান ডেলিভারি সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সেই সাথে সিজারের পর ইনফেকশনের সংখ্যা কম নয়। আপনি যদি সিজার করার পরিকল্পনা করে থাকেন বা সিজার করে থাকেন তাহলে আপনার মনের প্রশ্ন জাগতে পারি সিজারের পর ইনফেকশন কেন হয় 

বা সিজারে পর ইনফেকশন হয়েছে কিনা সেটা কিভাবে বুঝবেন সে সম্পর্কে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক সিজারের পর কি কি কারণে ইনফেকশন হতে পারে সেগুলো জেনে নেওয়া যাক।
  • সিজারের রোগীর পোশাক-আশাক পরিষ্কার না থাকা।
  • সিজার করার সময় জিনিসপত্র ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত দুর না করার কারণে।
  • মেডিকেল বা হাসপাতালে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য ইনফেকশন হতে পারে।
  • সিজারের ঘর ভালোভাবে পরিষ্কার না রাখা।
  • রোগীকে ঘরে নেওয়ার পর আত্মীয়-স্বজন থাকা সাক্ষাৎ করার কারণেও ইনফেকশন হতে পারে।
  • সিজারের সময় জীবাণুমুক্ত পানি ব্যবহার না করা।
  • সিজার করার পর কোন কিছু শরীরের ভিতরে থেকে যাওয়াতেও ইনফেকশন হতে পারে।
  • রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার কারণে ইনফেকশন হয়।
  • সিজারের পর সেলাই করার সময় সঠিকভাবে রক্তনালী বন্ধ না করার কারণে ইনফেকশন হতে পারে।
  • হাসপাতালের এক বেড থেকে অন্য বেডের দূরত্ব কম থাকার কারণে হাঁচি-কাশির মাধ্যমে সংক্রামন ছড়িয়ে যাওয়ার কারণে ইনফেকশন হতে পারে।
ওপারের উল্লেখিত কারণ গুলোর জন্য ইনফেকশন হতে পারে তাই ইনফেকশন হওয়ার আগে সকল মহিলাদের সচেতন থাকা উচিত। আশা করি সিজারের পর ইনফেকশন কেন হয় বুঝতে পেরেছেন।

সিজারের পর কাটা স্থানের যত্ন যেভাবে নিবেন

কোন কারনে যদি ডেলিভারি টা সিজারিয়ান সেকশন এর মাধ্যমে করতে হয় তাহলে সিজারের পরে রোগীর সুস্থতা চ্যালেঞ্জিং বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কেননা সিজারিয়ান এমন একটি অপারেশন যে অপারেশন করার পর নিজের যত্ন নিতে হয় এবং বাচ্চার যত্ন নিতে হয়। 

তাই আর্টিকেলের এই অংশে সিজারের পর কাটা স্থানের যত্ন কিভাবে নিবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন তাহলে সিজারের পর খুব সহজেই কাঁটা স্থানের যত্ন কিভাবে নিবেন জেনে নেওয়া যাক। সিজারের রোগীকে হাঁটাচলা করতে হবে এবং যখন রোগী শুয়ে থাকেন তখন পায়ের পাতা নড়াতে হবে। 

সিজারের পর রোগীকে একটু বেশি পানি খেতে হবে যাতে শরীরে পানির পরিমাণ কম না হয়ে যায়। হাঁচি বা কাশি করার সময় সেলাইয়ের কাটা জায়গাটা আলতো চাপ করে ধরে রেখে তারপর হাঁচি কাশি করতে হবে। সিজারে রোগীর বাচ্চা দেখাশোনা করার জন্য একজন সাহায্যকারী থাকা প্রয়োজন। 

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ খাওয়া। ৬ মাসের আগে কোন ভারী কাজ করা যাবে না। তিন মাসের আগে স্বামীর সঙ্গে স*হবাস করা যাবে না। কোষ্ঠকাঠিন্য হবে না এবং বুকের দুধ বাড়াবে এমন খাবার খাওয়া। যেমন প্রোটিনযুক্ত এবং টক জাতীয় খাবার খাওয়া। সেলাই জায়গা সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন সিজারের পর কাটা স্থানের যত্ন কিভাবে নিবেন।

সিজারের পর বেল্ট পরার নিয়ম

যেসব সিজারিয়ান মায়েরা রয়েছে তাদের জন্য এই অংশটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে কেননা সিজারের পর বেল্ট পড়ার নিয়ম জানাতে চলেছি যা একজন সিজারিয়ান মায়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সন্তান ধারণ করা একজন মহিলার জীবনে খুব কঠিন সময় একজন গর্ভবতী যেমন মাকে গর্ভে থাকা অবস্থায় তার সন্তানের যত্ন নিতে হয় ঠিক তেমনি সন্তান জন্ম দেয়ার পরও তাতে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।

প্রাকৃতিক প্রসবের এর চাইতে সিজারিয়ান সেকশন বেশি কঠিন। গর্ভধারণের পর ওজন কমানোর সহজ নয়। বিশেষ করে যদি আপনার সিজারিয়ান সেকশন হয়ে থাকে পেটের চর্বি কমানোর সহজ নয় এবং সিজারিয়ান ডেলিভারি এই অবস্থাকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে কারণ তখন সাধারণ পেটের ব্যায়াম করা যাবে না তবে সিজারিয়ান ডেলিভারির পর পেটের মেদ কমানোর বিকল্প উপায় রয়েছে তা হচ্ছে বেল্ট ব্যবহার করা।

গর্ভাবস্থায় বাড়তি ওজন পরে কমেনা তবে অতিরিক্ত ওজন আগে চিত্রে ফিরে আসতে পারেনা। ওজন কমানোর সাথে সাথেই ক্রমাগত ক্লান্তি এবং অপসাদ থাকবে যেমনটা আমরা সবাই জানি কারন ওই সময় কোন ব্যায়াম করা যায় না আমরা অনেকেই সিজার করে বেল্ট পরিধান করি। আমরা এই বেল্ট পড়ার মাধ্যমে অতিরিক্ত মেদ কমানোর চেষ্টা করি। 

তো চলুন সিজারের পর বেল্ট পরার নিয়ম এবং সিজারের পর কখন বেল্ট পড়া যাবে না সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। সিজারের পরে বেল্ট ব্যবহার করার সময় কয়েকটি বিষয়ে মাথায় রাখতে হবে তা হল। 
  • আপনাকে উপযুক্ত আকারের বেল্ট ব্যবহার করতে হবে। 
  • এমন ভাবে বেল্ট পড়ুন যাতে এটি খুব শক্ত বা আলগা না হয়। 
  • খাওয়ার আধা ঘন্টা পর বেল্টটি পড়ুন।
  • ঘুমাতে বা গোসল করতে বাইরে যাবেন না।
  • ইলাস্টিক ফাইবার বেল্ট ব্যবহার করুন। 
  • বেল্ট ভিজে গেলে ভিজা বেল্ট পরবেন না।
সিজারের পর কখন বেল্ট পড়া যাবে না তা হলঃ
  • সিজারের পর ইনফেকশন বেল্টে পড়া যাবে না। 
  • অতিরিক্ত টাইট বেল্ট হার্নিয়া হতে পারে। 
  • এছাড়া গরমে বেশিক্ষণ বেল ব্যবহার করলে ঘাম থেকে ইনফেকশন হতে পারে। 
  • প্রসবের সময় উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে ব্যবহার করা যাবে না। 

সিজারের কতদিন পর বেল্ট পরা যায়

আমাদের কাছে অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন সিজারের কতদিন পর বেল্ট পড়া যায়। আপনি যদি প্রথমবার মা হয়ে থাকেন তাহলে হয়তো ভাবছেন সিজারের ২-১ দিন পর থেকেই হয়তো বেল্ট পড়া যায় কিন্তু না এই কাজে কখনো করবেন না। এমনটা করলে আপনার সেলাইয়ের জায়গায় কোন বাতাস প্রবেশ না করে ইনফেকশনের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। 
এছাড়া আপনি যদি সেলাইয়ের জায়গা না শুকাতেই বেল্ট ব্যবহার করেন তাহলে প্রচণ্ড পরিমাণে ব্যথা পেতে পারেন। এখন বিষয় হচ্ছে সিজারের পর বেল্ট ব্যবহার করতে হলে আপনাকে ২০ থেকে ৩০ দিন মতো অপেক্ষা করতে হবে অর্থাৎ যতদিন না আপনার সিজারের সেলাইয়ের জায়গাটি পুরোপুরিভাবে শুকিয়ে না যাচ্ছে ততদিন আপনি বেল্ট ব্যবহার করতে পারবেন না।

আর যদি দেখেন আপনার সেলাইয়ের জায়গাটি পুরোপুরি ভাবে শুকিয়ে গেছে তাহলে আপনি সেদিন থেকেই বেল্ট ব্যবহার করতে পারবেন। সিজারের কতদিন পর বেল্ট পরা যায় এর কোন নির্দিষ্ট সময় নেই অর্থাৎ আপনার সেলাই যেদিন শুকিয়ে যাবে সেদিন থেকেই বেল্ট ব্যবহার করতে পারবেন। আশা করি সিজারের কতদিন পর বেল্ট পরা যায় তা জানতে পেরেছেন।

সিজারের পর সেলাইয়ের যত্ন

ব্যক্তিগত কারণেই হোক বা প্রসবকালীন সংকটের ফলেই হোক যখনই আপনাকে সিজারিয়ান সেশন এর বেছে নিতে হয় সেটা একটা বড় অস্ত্র পচারের রূপে বিবেচিত হয় কারণ এতে পেট ছিদ্র করে জরায়ু থেকে শিশুটিকে বের করা হয় তাই অস্ত্র পচারের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। যাতে আপনার ক্ষত নিরাময় পদ্ধতিতে সঠিকভাবে এগিয়ে যাই এবং আপনি সি সেকশনের ঝুকি থেকে সম্পূর্ণভাবে সেরে ওঠেন।

প্রথমে যে কাজটি করতে হবে তা হলো আপনার ক্ষতের সঠিক যত্ন নেওয়া। সম্ভবত নবজাতক শিশুটি আপনার অগ্রাধিকার তালিকায় এক নম্বর কিন্তু এখন আপনার নিজেকেও যত্ন নেওয়াটা মনে রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তো চলুন সিজারের পর সেলাইয়ের যত্ন কিভাবে নিবেন তা জেনে নেওয়া যাক।
  • ক্ষতস্থানটি প্রতিদিন পরিষ্কার করুনঃ জায়গাটি প্রতিদিন পরিষ্কার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার জায়গাটিতে ব্যান্ডেজ করা থাকে আর সেই ব্যান্ডেজ যদি অপরিষ্কার হয়ে থাকে তাহলে সেটি পরিবর্তন করুন।
  • গরম পানি ও সাবানঃ আপনার সিজার করা ক্ষত জায়গাটিতে গরম পানি ও হালকা সাবান দিয়ে ধুয়ে সব সময় পরিষ্কার রাখুন। পরিষ্কার কাপড় এবং এক টুকরো স্পন এ সাবান লাগিয়ে ফেনা নিংড়িয়ে পরিষ্কার করে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • ক্ষতস্থানটি ঘষবেন নাঃ গোসল করার সময় আপনার সিজার করা কত জায়গাটি কখনোই খসখসে গামছা দিয়ে অথবা কোন কিছু দিয়ে কখনোই ঘষবেন না। 
  • ক্ষতস্থানটিকে রক্ষা করুনঃ আপনার সিজারিয়ানের ফলে ভেতর এবং বাহির থেকে জায়গাটি কাটা থাকে আর বিভিন্নভাবে খুলে যেতে পারে যেমন হাঁচি-কাশি, ঝাঁকনি, বিছানা থেকে নামার সময় অথবা বসা অবস্থা থেকে দাঁড়ানো অবস্থায় সব সময় আপনাকে ক্ষতস্থানটি বাঁচিয়ে রাখতে হবে যাতে কোন মতে চাপ না পরে।
  • বরফের ব্যাগঃ যদি আপনার সিজার করার বেশ কিছুদিন পর সিজারের ক্ষতস্থানগুলোর আশেপাশে ফুলে থাকে তাহলে আপনি বরফের ব্যাগ নিয়ে সেই ক্ষত স্থানটিতে সেক দিতে পারেন এতে ক্ষতস্থানটির ফোলা ভাব অনেকটাই কমে যাবে।
  • ঢিলা ঢালা পোশাক পড়ুনঃ এমন পোশাক পরিধান করুন যেই পোশাক নরম এবং ঢিলাঢালা যাতে সিজার করা ক্ষতস্থানটিতে কোন প্রকার আচর অথবা আঘাত না লাগে। যেমনঃ বড় সাইজের টি শার্ট, ঢিলা ঢালা প্যান্ট ইত্যাদি।

সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে

অনেকেই জানতে চেয়ে থাকে সেই যাদের পর ব্যথা কতদিন থাকে কারন কোন মা যখন প্রথমবার সিজার করে তখন তার মনে অনেক প্রশ্ন কাজ করে তার মধ্যে এটি একটি। সিজারের পর বেশ কয়েকদিন ব্যথা থাকতে পারে এটি স্বাভাবিক। কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে সিজার করার পর অনেকদিন ব্যাথা থাকতে পারে এমনকি ২-৩ সপ্তাহ ধরে ব্যথা থাকতে পারে।

তবে আপনার যদি একটানা ব্যথা হয় অথবা জ্বর কিংবা ইনফেকশনের বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে বেশি দেরি না করে অবশ্যই একজন রেজিস্টার ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। ইতিমধ্যে উপরের আলোচনায় সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ কি কি আপনাদের জানিয়ে দিয়েছি তা দেখে আপনি খুব সহজেই বুঝে নিতে পারবেন ইনফেকশনের লক্ষণ কোনটি।

সিজারের কতদিন পর জার্নি করা যায়

অনেক সিজারিয়ান মায়েরাই রয়েছে যারা জানতে চেয়ে থাকে সিজারের কত দিন পর স্বাভাবিক জীবনে ধরা যায় অথবা সিজারের কতদিন পর জার্নি করা যায়। সিজারিয়ান অপারেশনের সেলাই গুলি এখন এত উন্নত হয়েছে যে সেলাই কাটার ব্যাপারটা প্রায় নেই ৫ দিনে দিনে রোগীকে বাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয় বাড়ি এসে স্বাভাবিক চলাফেরা করা যেতেই পারে।

ভারী বালটি তোলা, টিউবওয়েল পাম্প করা ৬ সপ্তাহ অব্দি বারণ করা হয়ে থাকে। আস্তে আস্তে সিঁড়ি ওঠানামা করা যায় ১ মাস বা ৬ সপ্তাহ পরেও বাইরের কাজে বেড়ানো যায়। পেটের ক্ষতস্থান মাঝেমাঝে গরম জলে পরিষ্কার করে এন্টিসেপটিক মলম লাগাতে হবে। ৭ দিন পর থেকে গোসল করা যায় তবে ক্ষতস্থান সঙ্গে সঙ্গে শুকনো পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে।

সিজার করে বাচ্চা হয়েছে বলে এক মাস শুয়ে থাকতে হবে এ ধারণা আজকের যুগে অচল তার কারণ পেটের ভিতর ও বাইরে এত উন্নত ধরনের সেলাই ও সুতো আজকের আবিষ্কার হয়েছে যে অপারেশনের ৭ দিন পর আর ভয়ের কারণ থাকে না। তবে একজন ডাক্তারের কাছ থেকে সিজারের কতদিন পর জার্নি করা যায় তা জেনে জার্নি করা উচিত।

সিজারের পর কতদিন ব্লিডিং হয়

সিজার অপারেশন করার পর অনেক মায়েরই ব্লিডিং হয় যার কারণে তারা ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়ে।চিন্তার কোন কারণ নেই সিজার অপারেশন করার পর ১ থেকে দেড় মাস পর্যন্ত ব্লিডিং হতে পারে।এছাড়া কিছু চাকা চাকা ভাবে রক্ত বের হতে পারে তার সাথে সাথে পেট কামড়াতে পারে। এর জন্য আপনি চাইলেই স্যানিটারি প্যাড অথবা ম্যাটারনিটি প্যাড ব্যবহার করতে পারেন।

তবে আপনার যদি সিজার করার পর অতিরিক্ত ব্লাডিং হয় অর্থাৎ এক ঘন্টায় যদি ২টা প্যাড ভিজে যায় কিংবা ১-২ ঘন্টা ধরে বা দীর্ঘ সময় ধরে ব্লিডিং হয় তাহলে সেটাকে ভারী রক্তপাত বলা হয়ে থাকে। আর এমনটা হলে দেরি না করে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। আশা করি আপনি সিজারের পর কতদিন ব্লিডিং হয় তার সঠিক উত্তর পেয়েছেন।

সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায়

সিজারের পর সেলাই শুকাতে কতদিন সময় লাগে, আপনি যদি সিজার করে থাকেন বা সিজার করবেন ভাবছেন তাহলে হয়তো এই প্রশ্নটা আপনার মনে একবার হলেও এসেছে তো চলুন আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে এই বিষয়টা নিয়ে একটু আলোচনা করা যায়। সাধারণত নরমাল সিজারিয়ান অপারেশনের পর ৭ থেকে ৮ সপ্তাহ সময় লাগে রোগীর সেলাইয়ের ক্ষত শোকাতে। 
একজন সিজারিয়ান রোগীর সিজারের পর সঠিক পরিচর্যা এবং পরামর্শ প্রয়োজন কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সঠিক পরামর্শ অনুযায়ী একজন সিজারিয়ান রুগী চলতে পারে না এর কারণে অধিকাংশ সিজারিয়ান রোগীর জটিলতা সৃষ্টি হয়। প্রথমত মাকে অবশ্যই সুষম খাবার খেতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। 

কোন অবস্থাতেই প্রস্রাব আটকে রাখা যাবে না এবং একজন সিজারিয়ান মাকে রাতে কমপক্ষে ৮ ঘন্টা এবং দিনে কমপক্ষে ২ ঘন্টা ঘুমাতে হবে অর্থাৎ সর্বমোট ১০ ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে হবে। অনেকে আবার বাচ্চার জন্য রাতে ঠিকমত বিশ্রাম নিতে পারেনা এবং সেজন্য তার ঘুমেরও ঘাটতি হয় এর কারণে শরীরের দুর্বল থাকে এবং নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়। তো প্রিয় পাঠক আশা করি আপনি সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায় তা জানতে পেরেছেন।

সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে শেষ কথা

আজকের এ আর্টিকেলে আপনাদের সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জানিয়েছি যে লক্ষণগুলি আপনার দেখা দিলে খুবই তাড়াতাড়ি একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং ডাক্তারের অনুসারী ওষুধ খেতে হবে। 

এছাড়াও ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি উক্ত আলোচনায় সিজারের পর ইনফেকশন হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে আপনাদেরকে জানিয়েছি যেগুলো মেনে চললে সিজারের ইনফেকশন থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এছাড়াও অনেক মা-বোনরা প্রশ্ন করে থাকেন সিজারের পর ইনফেকশন কেন হয় যে প্রশ্নের উত্তরটি ও দিয়েছি। 

এবং একজন মহিলা কিভাবে সিজারের পর কাটা স্থানের যত্ন নিবে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আশা করি আপনি পড়েছেন এবং উপকৃত হয়েছে। এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে অন্যদের সাথে শেয়ার করে দিবেন। আপনার যদি আর কোন প্রশ্ন থেকে তার কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Edu 360 BD নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url