ইউরিক এসিডের ঘরোয়া চিকিৎসা ও ব্যায়াম করার নিয়ম

বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মানুষই ঘরে বসে থাকেন এবং কোন কাজ করা ছাড়াই জীবন যাপন করছেন এর কারণে শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই আর্টিকেলে ইউরিক এসিডের ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। অনেকে অবহেলা করলেও ইউরিক এসিড একটি মারাত্মক অসুখ। ইউরিক এসিডের ব্যায়াম এবং ইউরিক এসিডের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ইউরিক এসিডের ঘরোয়া চিকিৎসা ও ব্যায়াম করার নিয়ম
ইউরিক এসিড বেড়ে গেলে পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা, আঙ্গুলে ব্যথা সহ ফুলে গিয়ে যন্ত্রণা করে আরো অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয় তাই ইউরিক এসিডের ঘরোয়া চিকিৎসা এবং ইউরিক এসিড কেন হয় সে সম্পর্কে জানা খুবই জরুরী। আপনারা যারা ইউরিক এসিড ইউরিক এসিডের ব্যায়াম ও ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক তারা এ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ

ইউরিক এসিড কেন হয় 

ইউরিক অ্যাসিড হল এক ধরনের রাসায়নিক যা আমাদের শরীরে ইউরিন নামক পদার্থ গোলকে ভেঙে দিয়ে তৈরি হয়। ইউরিন সাধারণত আমাদের শরীরে পানীয় এবং কিছু খাবার থেকে উৎপাদিত হয় যেমন মেকেরেল, শুকনো মটরশুঁটি, লিভার, অতিরিক্ত অ্যালকোহল খাওয়া, চিনি যুক্ত এবং সোডা পান করা এছাড়াও লিওকেমিয়া। 

এই ইউরিক এসিড পাঁচজনের মধ্যে একজনের হয়ে থাকে এবং পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের বেশি হয়ে থাকে। অনেকে এটাকে সাধারণ ভেবে থাকলেও ততটা সাধারন না এই ইউরিক এসিড খুব বেশি মাত্রা বেড়ে পেলে গেটেবাত সৃষ্টিসহ কিডনিতে গিয়ে জমা হয়ে কিডনিতে পাথর পর্যন্ত হতে পারে তাই আমাদের সতর্ক থাকা উচিত।
ইউরিক অ্যাসিড রক্তের সাথে মিশে সেটা প্রথম কিডনিতে যাই দিয়ে প্রসাবের সাথে বেরিয়ে যাই আপনার শরীরে যখন ইউরিক এসিডের মাত্রা যদি বেড়ে যায় তাহলে আপনি অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন এবং বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। ইউরিক এসিডের উচ্চ মাত্রা হলে সেটাকে হাইপারুরিসেমিয়া বলা হয়ে থাকে।

ইউরিক এসিডের ঘরোয়া চিকিৎসা

কিছু লোকের জন্য ইউরিক অ্যাসিড মাত্রা কমানোর জন্য ওষুধের প্রয়োজন হয় এবং কিছু মানুষ ক্ষেত্রে জীবনধারার খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তন করার ফলে ইউরিক এসিডের মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব তাই এই অংশে আমরা আপনাদের ইউরিক এসিডের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে জানাবো যেগুলো অনুসরণ করলে খুব সহজেই ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতে পারবেন।

১. চিনি এবং মিষ্টি এড়িয়ে চলুন
চিনি এবং মিষ্টিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সুগার। যা আপনার ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়াই এছাড়াও ডায়াবেটিস সহ বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে তাই চিনি ছাড়া চা কফি মিষ্টি সকল চিনি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।

২. পিউরিন যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা
পিউরিন যুক্ত খাবার ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়ায়। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত একটি গবেষণায় দেখা গেছে সামুদ্রিক খাবার এবং অতিরিক্ত মাংস খাওয়া ফলে রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়ায়।এবং ৪৫ হাজার ১২ বছর বয়সী পুরুষের উপর একটি গবেষণায় দেখা গেছে পিউরিন যুক্ত শাকসবজি, মসুর ডাল, মটর ইত্যাদি খেলে ইউরিক এসিড মাত্র বাড়ে না। 

৩. ব্যায়াম
একটি গবেষণায় দেখা গেছে ইউরিক এসিড, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস কমাতে ব্যায়াম অনেক সাহায্য করে। তাই আমাদের উচিত প্রতিনিয়ত ব্যায়াম করা এবং স্বাস্থ্য ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা ফলে ইউরিক এসিডের মাত্রা কমানো সম্ভব।

৪. হাই পিউরিন ফলমূল এড়িয়ে চলুন
এমন ফলমূল খাবেন না যেগুলো তে প্রচুর পরিমাণে পিউরিন রয়েছে যেমন কফি, পাউরুটি, বিভিন্ন বাদাম, আলু ইত্যাদি এসব খাবারগুলি যদি আপনার খাবার তালিকায় না রাখেন তাহলে কিছুটা হলেও ইউরিক এসিড থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

৫. ভিটামিন সি
আমরা সবাই জানি যে ভিটামিন সি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। এতে রয়েছে  অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরে ইউমিনিটে বাড়াই। ঠিক তেমনি আমাদের শরীরে এই ভিটামিন সি ইউরিক এসিড কমিয়ে দেয়। 

তাই আপনার প্রতিনিয়ত খাবার তালিকায় ভিটামিন সি যুক্ত খাবার রাখুন। এই ভিটামিন সি এর ক্ষেত্রে লেবু এবং কমলা লেবু কোন তুলনা হয় না। এছাড়াও আপনি পেয়ারা, আমলকি, আপেল ইত্যাদি এসব ফলগুলো খেতে পারেন এগুলোতেও ভিটামিন সি রয়েছে।

৬. বেশি বেশি পানি খান
বেশি বেশি পানি খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে ইউরিক এসিড প্রসাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায়।বাংলাদেশ এবং ইন্ডিয়া দুইটি গ্রীষ্ম প্রধান দেশ বলা যায় তাই আমাদের দিনে দুই থেকে তিন লিটার পানি খাওয়া খুবই জরুরী তাই আপনি যদি ইউরিক এসিড এবং কিডনি ভালো রাখতে চান সে ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত পানি পান করুন বেশি বেশি করে।

ইউরিক এসিড বেশি হলে কি হয়

একজন সাধারণ পুরুষের ক্ষেত্রে ইউরিক এসিডের মাত্রা হচ্ছে ২.৫-৭.০ (mg/dl) এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ১.৫-৬.০ (mg/dl) হয় তাহলে আপনার শরীরের রক্তের সাথে বেশি ইউরিক এসিড জমা হওয়ার ফলে ব্যথা সহ বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। 

এবং চিকিৎসা না করা হলে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে আপনার শরীর স্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে যেমন জয়েন্ট, হাড় ব্যথা, টেন্ডনস ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে এছাড়াও গবেষণায় ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়ার কারণ দেখা গেছে সেগুলো হলো কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ফ্যাট লিভার ইত্যাদি কারণে ইউরিক এসিড অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যেতে পারে। 

ইউরিক অ্যাসিড এর লক্ষণ গুলো কি কি

আপনার শরীরে যদি ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যায় তাহলে কিভাবে বুঝবেন এবং ইউরিক অ্যাসিড এর লক্ষণ গুলো কি কি সেগুলো সম্পর্কে আপনাদের জানাবো এই অংশে। ইউরিক অ্যাসিড মাত্রা বেড়ে গেলে সাধারণত কোন উপসর্গ সৃষ্টি করে না। 

বেশিরভাগ মানুষ জানে না তাদের ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে গিয়েছে পড়ে গিয়ে বুঝতে পারে যখন তাদের গাউট বা কিডনিতে পাথর হয় তখন তাই ইউরিক অ্যাসিড এর লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জানা খুবই জরুরী নিচে কয়েকটি লক্ষণ উল্লেখ করা হলো যেগুলো দেখে বুঝতে পারবেন আপনার শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে গিয়েছে।
  • শরীর ফোলা
  • বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা বা শরীর ব্যথা
  • জয়েনগুলো স্পর্শে গরম হয়ে যায়
  • ত্বক লাল এবং বেগুনি
  • গেটে ব্যথা।
  • পা ফুলে যাওয়া।

ইউরিক এসিডের ব্যায়াম কতটা কার্যকারী

ইউরিক এসিডের মাত্রা যখন শরীরে উচ্চ হয়ে যায় তখন তাকে বলে হাইপারইউরেসেমিয়া। হাইপারইউরেসেমিয়া থাকার ফলে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড যদি আমাদের জয়েন্ট এর মধ্যে ক্রিস্টাল ফ্রন্ট করে এবং জয়েন্টে প্রদাহ বা ব্যথা হয় তখন তাকে গেটে বলে। 
তো ইউরিক এসিডের ব্যায়াম এর কোনো ভূমিকা আছে কিনা সেটা এ অংশে আপনাদের জানাবো। যারা সুস্বাস্থ্যবান তাদের ইউরিক অ্যাসিড হওয়ার সম্ভাবনা কম। ইউরিক এসিডের মাত্রা কমিয়ে আনতে ব্যায়াম অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এই ব্যায়াম ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতে, ওজন, ব্যথা এবং গতিশীল বজায় রাখতে বেশ ভূমিকা পালন করে।

ইউরিক এসিড কমানোর জন্য কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম করা সবচেয়ে ভালো। তবে জয়েন্টের ব্যথা কমাতে চাইলে আপনাকে সাঁতার কাটতে হবে। এছাড়াও বাকি ব্যাঙগুলো আপনি করতে পারেন শক্তি বজায় রাখার জন্য আশা করি ইউরিক এসিডের ব্যায়াম কতটা কার্যকারী সেটা বুঝতে পেরেছেন।

ইউরিক এসিড টেস্ট খরচ

ইউরিক অ্যাসিড টেস্ট করতে কত টাকা লাগে এবং খরচ কত সে সম্পর্কে বলা খুবই মুশকিল কারণ বর্তমান সময় আপনারা জানেন বাংলাদেশ একেকটা সরকারি থেকে বেসরকারি মেডিকেল বিভিন্ন রকম খরচে টেস্ট করে। তবে অনুমানিক ইউরিক এসিড টেস্ট করতে আপনার ২০০ থেকে ৪০০ টাকা লাগতে পারে।

শেষ কথা

আপনার শরীরের যদি ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে গিয়েছে লক্ষ্য করেন তবে তাড়াতাড়ি একজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। আজকের এই আর্টিকেলে ইউরিক এসিডের ঘরোয়া চিকিৎসা এবং ইউরিক এসিডের ব্যায়াম করার নিয়ম এবং কতটা কার্যকারী সে সম্পর্কে বিস্তারিত আপনাদের জানিয়েছি।

আশা করি আপনি পোস্টটি পড়েছেন এবং উপকৃত হয়েছেন এই পোস্টটি পরে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অন্যদের সাথে শেয়ার করে দিবেন যাতে তারাও জানতে পারে। আমাদের এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন রকম তথ্য পেতে প্রতিনিয়ত চোখ রাখতে পারেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Edu 360 BD নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url