আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম ও খাবার তালিকা

আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের সাথে আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম এবং আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা ও ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আমাশয় একটি কমন রোগ, আমাশয় রোগ হয়নি এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না কম বেশি সবাই এই রোগে ভুগে থাকে তাই আপনি যদি এই রোগে ভুগে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম ও খাবার তালিকা
কেননা আজকের এই আর্টিকেলে আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম সম্পর্কে এবং আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা এর পাশাপাশি আমাশয় রোগের কারণ এবং লক্ষণ আপনাদের জানাবো। আমাশয় একটি মানব-অন্ত্রে রোগ জীবাণু সংক্রমণ রোগ।

সেজন্য দূরত্ব চিকিৎসা না নিলে হতে পারে পেট ব্যথা, জ্বর শরীরে খিচুনি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে তাই আমাশয় রোগ হলে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। চলুন তাহলে আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধ এবং খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

আমাশয় রোগের কারণ

আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম জানার আগে প্রথমে আমাশয় রোগের কারণ জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ চলুন তাহলে কি কি কারণে আমাশয় রোগ হতে পারে সেগুলি জেনে নেয়া যাক। পেট ব্যথা, ভাঙ্গা ভাঙ্গা পায়খানা, ও পেটে খিচুনি হওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিলে আমাশয় হতে পারে। 


প্রধানত Entamoeba histolytica প্রোটোজোয়ার আক্রমণে আমাশয় রোগ সৃষ্টি হয়। আরো বেশ কিছু প্রোটোজোয়া এই রোগ সৃষ্টি করতে সাহায্য করে যেমন Entamoeba Coli আমাশয় সৃষ্টিতে ভূমিকা নেই। প্রধানত খাদ্য এবং পানির মাধ্যমে প্রোটোজোয়া আমাদের দেহে প্রবেশ করে। 

আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম

আমাশয় রোগ হলে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে যে রকম চিনির শরবত ডাবের পানি ফলের রস ইত্যাদি। এর পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করতে হবে এই অংশে আপনাদের কিছু আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম উল্লেখ করব যেগুলি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করবেন তাছাড়া নিজেই ফার্মেসী থেকে কিনে সেবন করবেন না। 
  1. Emcil Tablet
  2. Zox Tablet
  3. Relexid Tablet
  4. Alexid Tablet
  5. Pivicil Tablet
  6. Flagyl 400 mg Tablet
  7. Pinam Tablet
  8. Pivcilin Tablet
ওপরের উল্লেখিত ঔষধ গুলি একজন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করুন এর পাশাপাশি তরল খাবার গ্রহণ করুন দেখবেন খুব দ্রুত আপনার আমাশয় রোগ ভালো হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।

আমাশয় রোগের লক্ষণ

একটি গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষের আমাশয় রোগ হয়ে থাকে। তোমার শরীর রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যেই কেবল মাত্র ১০ থেকে ২০ শতাংশ উল্লেখযোগ্য রোগ লক্ষণ দেখা যায়। বেশিরভাগ রোগীদের ক্ষেত্রে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য রোগ লক্ষণ দেখা যায় না। আমাশয় রোগের লক্ষণগুলো হলো
  • ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হয়।
  • বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব।
  • পেট ব্যথা করে।
  • দিনে প্রায় ৫ থেকে ৬ বার অর্ধতরল মলত্যাগ হয়।
  • মলে অতিরিক্ত শেরশা উপস্থিত থাকে এবং কখনো কখনো রক্ত দেখা যায়।
  • মলত্যাগ করার সময় কষ্ট হয় এবং তলপেটে অস্বস্তি হয়।
  • মল দুর্গন্ধ জনিত হয়।
  • রোগীর শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
  • রোগীর শরীরে খিচুনি হতে পারে।
  • অনেক সময় নিজের অজান্তেই পাতলা মলত্যাগ হয়।
  • চোখ মুখ শুকিয়ে যাওয়া এবং গলা বসে যাওয়া।
  • মেজাজের পরিবর্তন হয়।
  • শরীর দুর্বলতা এবং অস্থিরতা দেখা যায়
  • অতিরিক্ত মলত্যাগের কারণে শরীরে পানিস্বল্পতা এবং ইলেকট্রোলাইট ঘাটতি দেখা দিতে পারে। 
    এই উপসর্গগুলি যদি আপনার ভেতরে দেখা যায় তবে বুঝে নেবেন আপনার আমাশয় রোগ হয়েছে এবং দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করুন।

    আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

    পুরুষদের চাইতে নারীদের বেশি আমাশয় রোগ দেখা যায়। আমাশয় রোগ হলে পেটে ব্যথা হয়, পেট থেপে থাক, এসিডিটি হয়, পায়খানা অভ্যাসে পরিবর্তন দেখা যায় এবং মাথাব্যথা হয় তবে তবে এই সমস্যা অনেক রোগের ক্ষেত্রে হতে পারে। 


    জীবন যাপন ও খাদ্য অভ্যাসের পরিবর্তনে এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। কি খাচ্ছেন এবং কি খেতে হবে মাথায় রাখতে হবে যেসব খাবার খেলে আইবিএস এর সমস্যা দেখা দিতে পারি সেসব খাবার খাবেন না। চলুন তাহলে আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
    • আদাঃ পুরানো আমাশয় যাদের আছে তাদের উচিত আদা ১ গ্রাম মাত্রায় স্যুটের গুড়া গরম জলের সঙ্গে খাওয়া এর দ্বারা আম পরিপাক হয়।
    • আম পাতা ও জাম পাতাঃ কাঁচা আম পাতা এবং জাম পাতার রস গরম করে দুই থেকে তিন চামচ খেলেই আমাশয় রোগ ভালো হয়ে যাবে। এছাড়াও যাদের সাদা বা রক্ত আমাশয় রোগ যাদের আছে জামের কুচি পাতার রস ২ থেকে ৩ চামচ গরম করে ছেঁকে নিয়ে খেলে ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে আমাশয় ভালো হয়ে যায়।
    • থানকুনি পাতার রসঃ থানকুনি পাতার রস আমাশয় রোগের জন্য খুবই উপকারী। গ্রামে এই থানকুনি পাতা আপনারা পেয়ে যাবেন ১০ থেকে ১৫ টা থানকুনি পাতা নিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে এটিকে ব্লেন্ডারে সাহায্যে বেটে নিয়ে এর রসটা ছেকে নিয়ে খেয়ে নিন। থানকুনি পাতার রস তিতা হলে এটিকে আপনারা মধুর সাথে মিশেও খেতে পারেন।
    • আখগুড়ঃ আখগুড় আমাশয় রোগের জন্য খুবই উপকারী। আখগুড় বাজে কোন গুড় আপনার পেট পরিষ্কার রাখতে খুবই সাহায্য করে তাই আপনার যদি পুরনো আমাশয় রোগ থেকে থাকে তাহলে প্রত্যেকদিন সকালে এক চামচ করে আখগুড় খান দেখবেন খুব দ্রুত আমাশয় ভালো হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
    • ডাবের পানি এবং লেবুর পানিঃ আমাশয় হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায় ফলে শরীর ডিহাইড্রেশনের ভুগতে হয় আর এই ডিহাইড্রেশন থেকে বাঁচতে হলে আপনাকে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ডাবের পানি এবং লেবুর রস খেতে পারেন এটি আপনার শরীরের দুর্বলতা দূর করবে।
    • বেতো বা বতুয়া শাকের রসঃ রক্ত আমাশয় রোগের ক্ষেত্রে বেতো বা বতুয়া শাকের রস ৪ থেকে ৫ চামচ অল্প গরম করে দুধ মিশিয়ে খেলে অর্শের রক্ত পড়া বন্ধ হয় এক্ষেত্রে মহিষের দুধ হলে ভালো হয় শুধু আমাশা রোগে বেতো শাক শুকিয়ে গুড়ো করে অল্প দই মিশিয়ে ব্যবহৃত হয়ে থাকে তবে তার সঙ্গে ডালিমের রস দিতে বলা হয়েছে।
    • অর্জুন ছালঃ রক্ত আমাশয়ের ৪ থেকে ৫ গ্রাম অর্জুন ছাগলের দুধ মিশিয়ে খেলে সেরে যাবে। ।
    • ডালিম গাছের ছালঃডালিম গাছের ছাল আমাশয় রোগের জন্য বেশ উপকারী। ডালিম গাছের ছাল যদি সিদ্ধ করে খান তবে আমাশয় রোগ ভালো হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
    এইসব খাবার খারাপ পাশাপাশি বাইরের ভাজাপোড়া খাওয়া এবং ট্যাপের পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। যেকোনো ফল খাওয়ার আগে ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে ফলটি খান। এসব কিছু অনুসরণ করার পাশাপাশি ডাক্তারের চিকিৎসা গ্রহণ করুন।

    আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা

    আমাশয় পরিচিত একটি ব্যাধি যা মনুষ্য সংক্রমণের দ্বারা বিক্রিয়া করে। এন্টামি বা হিস্টোলাইটিকা ভুক্ত ব্যাকটেরিয়া মানব শরীরের পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণ করে এই রোগের সৃষ্টিকোয়েতায় যার ফলে পেট ব্যথা রক্ত আমাশয় পেট কামড়ানো সহ ইত্যাদি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।


    এটি এমন একটি রোগ যার সাথে আমরা সকলেই পরিচিত প্রায় তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা অর্থাৎ আমাশয় হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবে সে সম্পর্কে।
    • ডালিমের খোসাঃ ডালিমের খোসা আমাশয় দূর করতে ডালিমের খোসা অত্যন্ত উপকারী যারা আমাশয় ভুগছেন তারা ডালিমের খোসা সিদ্ধ করে খেতে পারেন। সিদ্ধ করে ডালিমের খোসা খেলে এই রোগ নিরাময়ে সুবিধা পাবেন আমাশয় দূর করতে ডালিমের শুকনা খোসা এবং কাঁচা খোসা দুটোই কার্যকর ১ থেকে ২ গ্রাম ডালিমের খোসা শূন্য করে মধুর সাথে মিশিয়ে খান এবং ভালো ফল পাবেন।
    • থানকুনি পাতাঃ থানকুনি পাতা আমাশই দূর করতে অনেক কার্যকরী সকালে উঠে খালি পেটে নিয়মিত থানকুনি পাতা সেবন করলেই এর ফলাফল দেখতে পাবেন অন্যভাবেও এই পাতাটি কাজে লাগাতে পারেন পরিমাণ মতো থানকুনি পাতা বেটে নিন এর সাথে মধু কিংবা চিনি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন এই উপাদানটি নিয়মিত দুইবার করে খেলে আপনার কষ্ট কমে যাবে
    একই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খেতে হবে যেমন চিনির শরবত, ডাবের পানি, ফলের রস, ঠান্ডা পানি ইত্যাদি খাবার খেতে হবে অতিরিক্ত পাতলা পায়খানা হলে একজন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন।

    আমাদের শেষ কথা

    আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের সাথে আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম এবং আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা ও রোগীর খাবার তালিকা উল্লেখ করেছি আশা করি আপনি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়েছেন। আমাশয় রোগ হলে আপনি বেশি বেশি তরল খাবার গ্রহণ করুন এর পাশাপাশি একজন চিকিৎসকের অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন। 

    আর্টিকেলে উল্লেখিত এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম গুলো শুধুমাত্র আপনাদের জানিয়েছি সেবনের জন্য নয় সেবন করতে হলে একজন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী করবেন। আজকের এই আর্টিকেল পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অন্যদের সাথে শেয়ার করে দিবেন আর যদি আপনার আমাশয় সংক্রান্ত যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করতে পারেন ধন্যবাদ।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    Edu 360 BD নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url