ফ্রান্সে নাগরিকত্ব পাওয়ার ১০টি উপায় ও বেতন সম্পর্কে

প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের সাথে ফ্রান্সে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় এবং ফ্রান্সে সর্বনিম্ন বেতন কত সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। ফ্রান্সে যাদের পেপার নেই বা কার্ড নেই তারা অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন বৈধ হতে কি কি লাগবে অর্থাৎ ফ্রান্সে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় কি তাই এই পোস্টটি পড়লে ফ্রান্সে বৈধ হওয়ার উপায় সমূহ জানতে পারবেন।

ফ্রান্সে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় ও ফ্রান্সে সর্বনিম্ন বেতন কতযারা ফ্রান্সে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন বা আগে থেকেই যারা ফ্রান্সে আছেন কিন্তু কার্ড বা কোন বৈধ হওয়ার পেপার নেই তাহলে সঠিক জায়গায় এসেছে আজকের এই আরটিকালে আপনাদের ফ্রান্সে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় এবং ফ্রান্সে সর্বনিম্ন বেতন কত, ফ্রান্সে বৈধ হওয়ার উপায় সমূহ খুটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব তাই এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন। 

ফ্রান্সে বেতন কত

আপনার যদি ফ্রান্সে কোন পেপার বা কার্ড না থাকে তাহলে নাগরিকত্ব পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে কাজ এই কাজের মাধ্যমে আপনি পেতে পারেন ফ্রান্স এর নাগরিকত্ব তাই ফ্রান্সে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় সমূহ জানার আগে প্রথমে আপনাদের জানাবো ফ্রান্সে বেতন কত সে সম্পর্কে। 

ফ্রান্সের বেতন নির্ভর করে শহরের উপরে ধরেন আপনি ফ্রান্সের প্যারিস শহরে আছেন এবং একটি লিগাল জব করেন তাহলে আপনার বেতন হবে ১৪০০ থেকে ১৭০০ ইউরো অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় ১ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পেতে পারেন।


কিন্তু কথা হল আসলেই কি ১৭০০ ইউরো পাবেন? না এর ভিতরে আনুমানিক ৩০০ ইউরো মত সরকার ট্যাক্স কেটে নিবে ফলে আপনার বেতন ১৩ থেকে ১৪০০ ইউরো মত থাকবে। আর এই সরকারের ট্যাক্স একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম দিতে হয়। 

আসলে ট্যাক্স ডিপেন্ড করে আপনি ফ্রান্সের কোন স্টেটে আছেন এবং কাজ করে কত টাকা ইনকাম করছেন এছাড়াও আপনার বউ বাচ্চা আছে কিনা এসব কিছুর উপর নির্ভর করে আপনার ট্যাক্স।

ফ্রান্সে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় সমূহ

ফ্রান্স দেশকে আমরা সবাই চিনি ফ্রান্স দেশের নাম জানেনা এমন লোক খুবই কম এখন কথা হল যে ফ্রান্সে বৈধ হওয়ার উপায় হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে ফ্রান্সে জব ভিসা হয় না এজন্য কেউ যায় বাই রোডে কেউ যায় টুরিস্ট ভিসা নিয়ে তো এই ভিসা নিয়ে গেলে তো সেখানে বৈধ হওয়া যায় না এইজন্য প্রত্যেককে বৈধ হতে হয় এবং কার্ড করতে হয় তো ফ্রান্সে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায়গুলো কি তা নিচে উল্লেখ করা হলো

১. প্রথমে হচ্ছে রিফিউজি স্ট্যাটাস যাকে আমরা কেস বলে থাকি তো এই সিস্টেমের কাজ হল সেখানে গিয়ে কোনো লইয়ার (lawyer) ধরে কেস করতে হয় আর এই কেসের মানে হলো যে তার দেশে সে নিরাপদ না এজন্য সে ফ্রান্সে গেল সেখানকার একটা নিরাপদ আশ্রয় নেওয়ার জন্য তো তার এই কেস যদি সেখানকার সরকার গ্রহণ করে বা একসেপ্ট করে তাহলে সে নাগরিকত্ব পেয়ে যায়।

২. এবং সে কার্ডটির মেয়াদ থাকবে ১০ বছরের এবং এই কার্ডটি পেতে হলে তাকে ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা খরচ করতে হয়। যারা কেসে পাশ করেন না বা ফিল করেন না তাদের জন্য তাদেরকে ২ থেকে ৩ বছরের একটি নাগরিকত্ব দেওয়া হয় সে সেই নাগরিকত্ব নিয়ে তারা কাজ করতে পারে।

৩. স্যালারি সিট মানে হচ্ছে ফ্রান্সে প্রত্যেকটি কোম্পানি সবাইকে বেতন দেওয়ার সময় একটি সিট দেওয়া হয় যাকে বলা হয় স্যালারি সিট তো তারা সেখান থেকে প্রত্যেকটি কোম্পানি সেখানকার গভমেন্ট কে একটি ট্যাক্স পে করে তো এরকম ২৪টি ট্যাক্স পে করলে সেই ট্যাক্সের রিসিট নিয়ে আপনাকে একটি ফাইলে জমা করতে হবে। 

সেই ফাইল জমা করার ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে নাগরিকত্ব পাওয়া যায় আর এই ট্যাক্স পে করে নাগরিকত্ব পাওয়ার সিস্টেমটা পোল্যান্ড, পর্তুগাল দুই কান্ট্রিতেই বিদ্যমান। 

৪. ফর স্টুডেন্ট মানে হচ্ছে যারা ফ্রান্সে পড়তে যায় অথবা কোর্স করতে যাই সেই কোর্স কমপ্লিট করলেই তাকে নাগরিকত্ব দেয়া হয়। ফ্রান্সে নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে এই সিস্টেমটি সবচেয়ে সহজ।

৫. মেডিকেল ইস্যু ফ্রান্সের মধ্যে যাদের নাগরিকত্ব নেই বা পেপারস নেই বা যারা বৈধ না সবাইকে চিকিৎসা ফ্রি দেওয়া হয় সম্পূর্ণ ফ্রি চিকিৎসা কিন্তু যারা বৈধ বা যাদের নাগরিকত্ব আছে তাদেরকে ৩০% পে করতে হয় বাকি ৭০% ফ্রি মেডিকেল সিস্টেমটি অনেক লং স্টোরি এটি বলতে গেলে অনেক সময় লাগবে।

৬. আপনার সন্তান যদি সেখানকার কোন স্কুলে বা কলেজে ৩ বছর পড়ালেখা করে তাহলে সন্তান এবং তার পেরেন্টস কে নাগরিকত্ব দেওয়া হয় দেন হচ্ছে এবং কোন দম্পতির সেখানে কোন বাচ্চা জন্ম হয় তাহলে সেই বাচ্চা সহ তারা দুজনেই নাগরিকত্ব পেয়ে যায়।

৭. ফ্রান্সে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় হচ্ছে স্পেশাল টেলেন্ট তো এই স্পেশাল ট্যালেন্ট মানে কি এর মানে হচ্ছে যদি আপনার ফুটবল ক্রিকেট বা হকি বা ব্যাডমিন্টন যেকোন খেলাতে আপনার ট্যালেন্ট থাকতে হবে যেমন ধরুন ফ্রান্সের খেলোয়াড় পোকবা, এমবাপ্পি তারা কিন্তু ফ্রান্সের না তারা ওদের ট্যালেন্টের কারণে নাগরিকত্ব পেয়েছেন 

বা সেখানকার নাগরিক হয়েছেন সবাইকে যে ফুটবল খেলতে হবে তোর সবাইকে যে ফুটবল খেলতে হবে তা কিন্তু নয় আপনার যে কোন ট্যালেন্ট থাকতে হবে আপনি সেখানকার নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন।

যেমন স্পেনে যদি কেউ ৩ বছর থাকে তাহলে তাকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয় কোন প্রকার ট্যাক্স দিতে হয় না শুধুমাত্র তিন বছর থাকলেই নাগরিকত্ব দিয়ে দেওয়া হয় তবে শুধু ৩ বছর থাকলেই হবে না আপনাকে ৩ বছর থাকার প্রমাণ দেখাতে হবে যেমন শপিং করার ক্যাশ মেনু 

এবং ডাক্তার দেখিয়েছেন সেই প্রেসক্রিপশন প্রমাণস্বরূপ দেখাতে হবে তাহলে আপনাকে নাগরিকত্ব দিয়ে দেয়া হবে আর এই একই সিস্টেম ফ্রান্সেও তবে ফ্রান্সে একটু অসুবিধা হচ্ছে ফ্রান্সে আপনাকে থাকতে হবে ১০ বছর।

৮. আপনাকে ফ্রান্সে বিনিয়োগ করতে হবে তাহলে আপনি নাগরিকত্ব সনদ পাবেন তো সেখানে কত বিনিয়োগ করতে হবে বাংলাদেশী টাকায় মিনিমাম ৪০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।

৯. ফ্রান্সে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় হচ্ছে বিয়ে প্রত্যেকটি দেশেই এই নিয়মটি আছে যে বিয়ে করলেই নাগরিকত্ব পাওয়া যায় তো এর মানে হলো যদি আপনি ফ্রান্সের কোন নাগরিকত্ব আছে বা পেপার প্রাপ্ত ছেলে বা মেয়েকে বিয়ে করেন সেক্ষেত্রে আপনি ফ্রান্সের নাগরিকত্ব পাবেন। তাহলে এই হল ফ্রান্সে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় গুলো আশা করি আপনি সবকিছু বুঝতে পেরেছেন।

ফ্রান্সে সর্বনিম্ন বেতন কত

অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন ফ্রান্সে সর্বনিম্ন বেতন কত? চলুন তাহলে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। বিভিন্ন দেশ থেকে ফ্রান্সে গেলে আপনার কার্ড থাকবে না এটা কমন জিনিস দেন হচ্ছে টুরিস্ট বা ভিজিট ভিসা নিয়ে গেলেও কিন্তু আপনার ভিসার মেয়াদ থাকবে ৩ মাস এরপরে আপনি অবৈধ হয়ে যাবেন।

তো ফ্রান্সে যাদের কার্ড থাকে না যারা বৈধ না এদেরকে কোন কোম্পানি কাজে নেয় না কারণ এদেরকে কাজে নিলে কোম্পানির সমস্যা হয় কারণ যদি কোন পুলিশ ধরতে পারে যে এর কার্ড নেই আপনি জব দিলেন তাহলে সেই কোম্পানির অনেক জরিমানা হয়।


এজন্য সব কোম্পানি কিন্তু জব আপনাকে দিবে না তো এরপরেও কিছু কোম্পানি আপনাকে জব দিবে কিন্তু আপনাকে কাজ করতে হবে লুকিয়ে কারণ পুলিশ দেখলে সমস্যা হবে তাই। তো এখন প্রশ্ন হলো যে এই ব্যাকসাইডে লুকিয়ে জব করলে আপনাকে বেতন দিবে কত টাকা এখন যেহেতু আপনার কোন কার্ড নেই বা পেপারস নেই আপনি জব করতেছেন বাধ্য হয়ে

সেজন্য তারা আপনাকে বেতন দেবে বেসিক বেতনের অর্ধেক আর ফ্রান্সের গভমেন্টের রুলস এবং বেতনের স্কেল অনুযায়ী ফ্রান্সে সর্বনিম্ন বেতন হচ্ছে ১৫০০ ইউরো আর এই বেতন পেতে হলে আপনাকে কাজ করতে হবে ডেইলি ৭ থেকে ৮ ঘন্টা।

ফ্রান্সের টাকার মান কত

আপনি কি জানেন ফ্রান্সের টাকার মান কত এবং ফ্রান্সের এক টাকা সমান বাংলাদেশি টাকা কত হয় যদি না জেনে থাকেন তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক। আপনারা সবাই জানেন প্রতিটা দেশেরই টাকার মান ভিন্ন হয় তাই বর্তমানে সময়ে ফ্রান্সের ১ টাকা সমান বাংলাদেশি ১১৬ টাকা ৬০ পয়সার সমান।

ফ্রান্সে কোন কাজের চাহিদা বেশি

যারা ফ্রান্সে যাওয়ার কথা চিন্তাভাবনা করছেন তাদের ফ্রান্সে কোন কাজের চাহিদা বেশি সে সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রান্সে কাজের ভিতর সবচেয়ে নিরাপদ এবং ভাল কাজ হচ্ছে রেস্টুরেন্টের কাজ এই রেস্টুরেন্টের কাজের বিভিন্ন ক্যাটাগরি রয়েছে পিজ্জা, স্যান্ডউইচ ইত্যাদি। 

কিচেনের মধ্যে যে কাজগুলো রয়েছে এগুলা আপনারা বাংলাদেশ থেকে শিখে আসতে পারেন এবং ফ্রান্সে এসে সবথেকে সুবিধার কাজ হচ্ছে ডেস ওয়াশ। এছাড়াও ফ্রান্সে পাইপ ফিটিং, রেস্টুরেন্ট, হোটেল, এবং ড্রাইভিং সহ ইত্যাদি কাজের চাহিদা বেশি রয়েছে।

আমাদের শেষ কথা

আপনারা যারা ফ্রান্সে রয়েছেন অবৈধভাবে তাদের বৈধ হওয়ার জন্য আমি যে দশটি উপায় আপনাদের জানিয়েছি এ দশটি উপায়ের মধ্যে থেকে একটি উপায় বেছে নিয়ে আপনি খুব সহজেই বৈধ হতে পারবেন এছাড়াও ফ্রান্সে যারা ভালো কাজ পাচ্ছেন না তাদেরকে বলব ফ্রান্সে ড্রাইভিং, রেস্টুরেন্ট এবং হোটেল ইত্যাদি

এই সকল কাজগুলো তো অনেক চাহিদা রয়েছে তাই এ সকল কাজগুলি আপনারা করতে পারেন। আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের সাথে ফ্রান্সে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় গুলো এবং ফ্রান্সে সর্বনিম্ন বেতন কত সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি এছাড়াও ফ্রান্সে সর্বনিম্ন বেতন কত ইত্যাদি আরো অনেক বিষয়ে আলোচনা করেছি।

আশা করি আপনি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়েছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন। ফ্রান্সে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় সংক্রান্ত যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তবে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন। আরো বিভিন্ন রকম তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে প্রতিনিয়ত চোখ রাখতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Edu 360 BD নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url